ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

‘স্যোশাল মিডিয়ায় গুজবের জবাব অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮
‘স্যোশাল মিডিয়ায় গুজবের জবাব অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে’

ঢাকা: সরকারকে বিব্রত করার জন্য একটি গ্রুপ মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নেমেছে জানিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রত্যেকটি গুজবের জবাব প্রথমে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে শুরু করবো।

মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গুজব: গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এ সময় গুজবের জবাব দেওয়ার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন তারানা হালিম।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কোনো স্ট্যান্ডার্ড সেট করতে পারিনি বা করা যায় না। সে কারণে আমাদের ফাইটটা একটু কঠিন হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার বাকরোধ করতে চাই না, কণ্ঠরোধ করতে চাই না। আমাদের জেনারেশন ফেসবুকে যাই দেখে তাই বিশ্বাস করে। আমরা যখন সঠিক তথ্য নিয়ে উপস্থিত হই তখন মনে করে যে সত্যি কথাটা বলি না।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলার সময়ে ধানমন্ডিতে শিক্ষার্থী হত্যা ও নির্যাতনের গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরে সেখানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

পরিকল্পিতভাবে এমনটি করা হয়েছিল জানিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ছবি একটি ভারতের জম্বু-কাশ্মীরের মৃত নারীর মরদেহের ছবি, ধর্ষিত ছাত্রীর ছবি হিসেবে যা প্রচার করা হয়েছিল এটি ছিল এই বছর জুনে কলকাতার সোনাপুর ও সুভাষপুর স্টেশনের কাছে পাওয়া কিশোরীর মরদেহের ছবি। আরেকটি ধর্ষিত নারীর ছবি যেটি ছাত্রীর ছবি বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেটি মরক্কোতে গৃহকর্মী নির্যাতনের ছবি।

তিনি বলেন, এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে কোট করে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে, তার জনপ্রিয়তাকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিবাদ পেয়েছি।

তারানা হালিম বলেন, সমস্যাটা হয় আমাদের অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্সটা দেরিতে শুরু করি। ততক্ষণে এই গ্রুপ যারা আমাদের ইমেজ ক্ষণ্ন করার জন্য বিশাল ফান্ড নিয়ে স্যোশাল মিডিয়াতে নেমেছে, তারা সাড়ে সর্বনাশ করে ফেলার পর আমরা ওরাসিন কে দিয়ে শুরু করি, যখন ফাইমক্সিল খাওয়ার কথা। তাও শুরু করি বেশ দেরিতে। কাজেই আমরা এই ভুলটা আর করব না। এবারো কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি তড়িৎ গতিতে রি-অ্যাক্ট করতে, আমরা স্যোশাল মিডিয়ার প্রত্যেকটি জবাব প্রথমে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে শুরু করবো। কোনো লো ডোজে কাজ হবে বলে মনে হয় না। কাজেই আমরা ইমিডিয়েট রেসপন্স টিম গঠন করবো।

গুজব থেকে কেউ নিরাপদ নই এমন মন্তব্য করে তারানা হালিম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যেমন অনিরাপদ আপনারাও (গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান) কেউ নিরাপদ নন, আপনাদের লোগো ব্যবহার করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য অপকর্মগুলো হচ্ছে।

করণীয় সম্পর্কে তারানা হালিম বলেন, অনলাইন নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। আমি মনে ইমিডেয়েট রেসপন্স ওয়ার্কিং টিম গঠন করা প্রয়োজন। এটা আগেই নির্দেশনা ছিল, আমি পিআইডিকে অনুরোধ করব আগামী ১৫ দিনের একটা কাগজ অন্তত টেবিলে চাই যে এটি ২৪ ঘণ্টায় তিনটি ভাগে বিভক্তে হয়ে কাজ করবে এবং তারা সব স্যোশাল মিডিয়া দেখে যাচাই করবে এবং তার একটি প্রতিবেদন আপনারা ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে যেন পান এটা গুজব।

পাশাপাশি মানুষের মনোভাব পরিবর্তনের জন্য স্যোশাল ক্যাম্পেইন প্রয়োজন বলে জানান তারানা হালিম।

তিনি বলেন, কথায় কথায় ফেসবুকে নানা ধরনের গালিগালাজ করে, আমার মনে হয় না কোনো সভ্য জাতি। রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকতে পারে, কিন্তু এ ধরনের অশালীন শব্দ চয়ন করে! আমারা নেগেটিভ নিউজে বেশি আকৃষ্ট হই, সেই মাইন্ড সেট পরিবর্তন করতে হবে।

স্যোশাল মিডিয়ায় গুজব সৃষ্টি করতে লন্ডন থেকে জামায়াত-শিবির ফাইন্যান্স করে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, তিনশ’রও বেশি ফেসবুক পেইজ জামায়াত-শিবির পরিচালনা করে। সেগুলোতে অর্থায়ন হয় লন্ডন এবং অন্যান্য জায়গা থেকে। এর সঙ্গে পারবো কীভাবে সেটি আমাদের টেকনিক্যালি চিন্তা করতে হবে।

একটা গান আছে, শুরুতেই খেলা শেষ করো না, কিন্তু স্যোশাল মিডিয়ার অপপ্রচারের খেলা শুরুতেই শেষ করতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে আপনারাও সহযোগিতা করবেন। যেকোনো গুজব এলে অন্তত একটা টকশো করবেন।

তারানা হালিম বলেন, অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর রেজিস্ট্রেশন খুব দ্রুততার সঙ্গে করতে চাই। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছে আমরা এ বিষয়টি পার করছি, যাতে দ্রুততার সঙ্গে একটি সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে।

প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য সচিব আবদুল মালেক বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, গুজবের বিষয়ে দেশে কোনো ধরনের গবেষণা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কীভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশের প্রেক্ষপটে বেশ কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরে এই অধ্যাপক গুজব থেকে রক্ষার কিছু কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮
এমআইএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।