ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

পরিকল্পনামন্ত্রীকে সিঙ্গেল লটে ট্যাব না কেনার অনুরোধ পলকের

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২১
পরিকল্পনামন্ত্রীকে সিঙ্গেল লটে ট্যাব না কেনার অনুরোধ পলকের

ঢাকা: করোনা সংকটে ধীরগতি দেখা দিয়েছে জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১ প্রকল্পে। ফলে নতুন করে আবার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জাতিসংঘের বড় অংকের অনুদান না মিললেও এ প্রকল্পে নতুন করে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব ও ৭২টি এসি কেনা হচ্ছে।  

মূল ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ১৮১ কোটি ১১ লাখ টাকা অনুদান সংগ্রহ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এ টাকা মিলছে না। আন্তঃখাত সমন্বয়ের ক্ষেত্রে প্রকল্প সংশোধন করা হবে।

প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রকল্প সাহায্যের টাকা না মিললেও প্রায় ৪ লাখ ট্যাব কেনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কারণ ট্যাব কেনার জন্য অতিরিক্ত ৫৫৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে, যা বাস্তবসম্মত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।  তারপরও কোনো একটা কোম্পানিকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য মাত্র একটি (সিঙ্গেল) লটে আইসিটি সামগ্রী কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিষয়টি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিবিএসের মাধ্যমে ট্যাব ও এসি সংগ্রহের জন্য আহ্বানকৃত দরপত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো প্রস্তাবনা অনুযায়ী সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আহ্বানকৃত দরপত্র সংশোধনের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বরাবর আবেদন করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিবিএসের মাধ্যমে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব ও ৭২ পিস এয়ার কন্ডিশনার (এসি) সংগ্রহের জন্য আহ্বানকৃত দরপত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো প্রস্তাবনা অনুযায়ী সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনার জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন প্রতিমন্ত্রী পলক।

পলক বলেন, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে এ খাতের দেশীয় শিল্পের প্রসার ও আন্তর্জাতিক বাজারে গ্রহণযোগ্য অবস্থান তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। আপনি (পরিকল্পনামন্ত্রী) জানেন যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিবিএস বিগত ২৩ জুন ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাবলেট ও ৭২টি এসি সংগ্রহের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত সহজ করা একান্ত আব্যশ্যক। ‘টেন্ডারে (দরপত্র) শুধুমাত্র একটি সিঙ্গেল লটের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকার শর্তারোপ করা হয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ৪টি লটে এগুলো সংগ্রহ করা যৌক্তিক হবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা হিসেবে বিগত ৩ বছরে একাধিক কার্যাদেশ/ চুক্তির মাধ্যমে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার আইটি পণ্য (যেমন- মোবাইল, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ এবং আইটি একসেসরিস) সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ।

এত বড় ও গুরুত্বপূৰ্ণ দরপত্র শুধুমাত্র একটি লটে ভুক্ত না করে কমপক্ষে ৪টি লটে বিভক্ত করে প্রতিযোগিতামূলক লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছে আইসিটি বিভাগ। ট্যাবের কার্যকারিতা ও কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য র‌্যাম সাইজ ৪ জিবি অথবা ৬৪ জিবি উল্লেখ করা, যাতে একটি টেকসই এবং গুণগতমান সম্পন্ন ট্যাব সরবরাহ নিশ্চিত হয়।

সূত্র জানায়, একটি লটে ট্যাব কেনা হলে বিশেষ একটি কোম্পানি সুবিধা পাবে। দেশীয় কোনো কোম্পানি টেন্ডারে অংশগ্রহণই করতে পারবে না।

তবে এ বিষয়ে বিবিএসের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, একটি লটেই এগুলো কেনা হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এমনকি টেন্ডারও সাবমিট হয়ে গেছে। আমরা এখন টেন্ডারগুলো মূল্যায়ন করব।

বিবিএস জানায়, প্রকল্পের কিছু বিষয়ের ব্যয় হ্রাস-বৃদ্ধি করা হবে। প্রকল্পে নতুন কিছু হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার কেনার প্রস্তাব করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহে পরিবর্তন আসায় অর্থাৎ ইউনিমোড পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপি এবং কর্মপরিকল্পনা সংশোধন করা হবে।

‘জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১’ প্রকল্পের আওতায় নানা কাজ সম্পন্ন হবে। জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৭৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ছিল ১ হাজার ৫৭৮ কোটি ৬৮ লাখ এবং প্রকল্প সাহায্য ছিল ১৮১ কোটি ১১ লাখ টাকা। কিন্তু সাহায্যের টাকা না পাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় কমানো হচ্ছে। নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হচ্ছে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলমান। ২০২৪ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ পূর্ণ হবে।

পৃথিবীজুড়ে প্রায় ১ কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। এদের বাদ দিয়ে আর জনশুমারি নয়। একইসঙ্গে বাংলাদেশে অবস্থানরত সব বিদেশিকে গণনার আওতায় আনা হবে। কেউ যেন বাদ না পড়ে, সেই লক্ষ্যে জনশুমারির আওতায় দেশের সব নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ কাজ শতভাগ সফল করতে স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠি দেবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। একইভাবে বাংলাদেশেও নানা প্রকল্পে কর্মরত ভারত, জাপানসহ নানা দেশের নাগরিকদেরও গণনার আওতায় আনা হবে।  

পপুলেশন অ্যান্ড হাউজিং সেনশাস ২০২১ প্রকল্পের আওতায় ষষ্ঠ জনশুমারি অনুষ্ঠিত হবে। স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে ২০২১ সালে ষষ্ঠ ডিজিটাল জনশুমারি করা হবে। এ পদ্ধতিতে দেশের একটি থানাও বাদ পড়বে না। স্যাটেলাইট ইমেজ দেখে জনশুমারিতে সারাদেশে ৪ লাখ গণনাকারী তথ্য সংগ্রহ করবেন। শিক্ষিত বেকারদের জনশুমারি প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে।  

এর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জনশুমারির কাজে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে এবার তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে না। ৭ দিনে ৪ কোটি খানার (পরিবার) তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ১ জন গণনাকারী ১০০টি খানার তথ্য সংগ্রহ করবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২১
এমআইএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।