ঢাকা: শিশুদের ডিজিটাল যন্ত্র বা ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য প্যারেন্টাল গাইডেন্স অনুসরণের মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইসে সম্পৃক্ত করতে হবে।
অনলাইনে যুক্ত হবার দায় শিশুদের ওপর না চাপিয়ে ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষক ও অভিভাবকদেরও ডিজিটাল ডিভাইস বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, সন্তানের দক্ষতা সৃজনশীলতা ও মেধাকে বিকশিত করার জন্য পরীক্ষার ফলাফলের জন্য চাপ না দিয়ে তাকে শিক্ষার্থী হিসেবে তৈরি করতে হবে। দেশ যত ডিজিটাল হচ্ছে ডিজিটাল অপরাধ তত বাড়ছে ও ডিজিটাল নিরাপত্তার গুরুত্ব তত বাড়ছে। শিশুদের সুরক্ষা করতে না পারলে আমরা আমাদের উন্নত, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে পারব না।
মন্ত্রী রোববার ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স আয়োজিত শিশু সুরক্ষা প্রেক্ষাপট ও করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স-এর সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আনম আজিজুল হক, সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, এনসিটিভি সদস্য প্রফেসর মশিউজ্জামান ও প্রফেসর রিয়াজুল হাসান এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স-এর নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
মন্ত্রী শিশু সুরক্ষা সম্পর্কে করণীয় তুলে ধরে বলেন, শিশুরা আমাদের ভবিষ্যত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূলমন্ত্র ভবিষ্যত প্রজন্মকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা। এ ব্যাপারে যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রায় দুই দশক আগে ১৯৯৯ সালে ঢাকার অদূরে গাজীপুরে শিশুদের জন্য ডিজিটাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের ফলে কাগজের বই ভিত্তিক শিক্ষার যুগ শেষ। এখনকার শিক্ষার জন্য দরকার শিক্ষার উপাত্তকে ইন্টারঅ্যাকটিভ, মাল্টিমিডিয়া ও ডিজিটাল কনটেন্ট। এই লক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল শিক্ষা চালু করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, শিশুদের পড়ানোর মতো কঠিন কাজ হতে পারে না। শিশুরা যাতে খেলার ছলে আনন্দদায়কভাবে শিক্ষাটাকে ভালভাবে গ্রহণ করে সেজন্য প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ডিজিটাল কন্টেন্ট করেছি। এর ফলে শিক্ষার্থী যারা এই পদ্ধতিতে পাঠ গ্রহণ করছে তারা এক বছরের পাঠক্রম তিন মাসেই সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।
শিশুরা ইন্টারনেটে যুক্ত হবে কী না বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার উল্লেখ করে কম্পিউটারে বাংলা ভাষার প্রবর্তক মোস্তাফা জব্বার বলেন, এবার করোনায় বাধ্য হয়েই শিশুদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস অভিভাবকরা তুলে দিয়ে তাদের অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। ডিজিটাল যুগে শিক্ষাকে কেবল শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ রাখার সুযোগ নাই। এই লক্ষ্যে সরকার শ্রেণি কক্ষের সঙ্গে শিক্ষাকে অনলাইনে সংযুক্ত করতে কাজ করছে।
তিনি ইন্টারনেট নিরাপদ রাখতে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি ও উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, যত বেশি ডিজিটাল হচ্ছি ডিজিটাল নিরাপত্তা ঝুঁকি তত বাড়ছে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে আমরা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ হাজার পর্নো সাইট ও ৬ হাজার জুয়ার সাইটসহ বিপদজনক সাইটগুলো বন্ধ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি যাতে বিনষ্ট না হয় তা তাদের মেনে চলতে অনেকটা সফল হয়েছি এবং ভবিষ্যতে এই ব্যাপারে আরও সুফল পাব।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের সচেতনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি সরকার, বিশেষত বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে যেসব কর্মকাণ্ড করছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন।
তিনি জানান, বিটিআরসি নিজেরা ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল গঠন করেছে। বিটিআরসি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সঙ্গে সর্বাত্মক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। সিটিডিআর এর মাধ্যমে বিটিআরসি যেসব সাইট সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার করছে সেইসব বন্ধ করছে।
তিনি বলেন, সরকার শিশুদের নিরাপদ ও সচেনতভাবে গড়ে তোলার জন্য সব রকম কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২১
এমআইএইচ/আরএ