ঢাকা: প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহারকে আরও এগিয়ে নিতে বাংলায় গুণগত কনটেন্ট নিশ্চিত করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) গুলশানে মোবাইল ফোন অপারেটর রবির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত ‘প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ভাষা নদীর মতো বহমান। ভাষার কিছু অপব্যবহার সত্ত্বেও প্রবাহমান নদীর মতো বাংলা আপন গতিতে প্রবাহমান থাকবে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমাদের কাজ তরুণ প্রজন্মকে সংশ্লিষ্ট করে প্রযুক্তির মাধ্যমে এর অগ্রগতি নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বিশ্বের ৩৫ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাতৃভাষা বাংলার রাজধানীতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। আগামী পঞ্চাশ বছরে বাংলা ভাষা কেবল জনসংখ্যার হিসেবেই নয়, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে ব্যবহারের দিক থেকেও বাংলা হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা।
তিনি আরও বলেন, সরকারের গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১৫৯ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ১৬টি টুলস উন্নয়ন করা হচ্ছে।
মোস্তাফা জব্বা বলেন, শুধু ভাষাকে নয়, আমাদের বর্ণমালাটিকেও ভালোবাসতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশই বাংলার রাজধানী। বাংলা ভাষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদেরই কাজ করতে হবে। সে প্রেক্ষিতে অনন্য এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য রবিকে ধন্যবাদ জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার অন্তর্ভুক্তির ফলেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে পেরেছি। জনসংখ্যার বিচারে বাংলা সপ্তম অবস্থানে থাকলেও ইন্টারনেট ব্যবহারে শীর্ষ ৪০টি ভাষার মধ্যে বাংলা ঠাঁই পায়নি। তাই বাংলার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে সর্বস্তরের জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে।
বিজয় ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন জুঁই বলেন, শিশুকে আমরা প্রথম কিন্তু ‘এ’ শিখাই না; শিখাই ‘অ’। এটা উপলব্ধির ব্যাপার। তাই প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহারকে আরও ত্বরান্বিত করতে আমাদের সেই উপলদ্ধির জায়গাটা থেকে কাজ করতে হবে। বিজয় ডিজিটালের আওতায় আমরা শিশুতোষ উপায়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে শিশুদের কাছে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তাদের পাঠ্যপুস্তকের পাঠগুলো উপস্থাপন করছি। সেই উপস্থাপন বাংলায় বলেই আমরা তাদের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারছি।
টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সভাপতি রাশেদ মেহেদী বলেন, ইন্টারনেটে আমাদের বাংলার পরিভাষাভিত্তিক শব্দভাণ্ডার নিশ্চিত করতে হবে। প্রযুক্তি-নির্ভর সাহিত্যও প্রযুক্তিতে ওই ভাষার ব্যবহারকে সমৃদ্ধ করতে পারে।
টেকশহর ডটকম’র সম্পাদক মুহাম্মদ খান বলেন, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার উপস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টির মাত্রাটা ৫০ শতাংশের বেশি না। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য আরও সরকারি উদ্যোগ কাম্য। পাশাপাশি প্রবাসীরা যেন সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সাথে বাংলায় যোগাযোগ বলতে পারেন, সে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যান্য ভাষার ক্ষেত্রে সে উদাহরণ রয়েছে।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার শিহাব আহমদ বলেন, প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহারকে সর্বজনীন করতে তিনটি ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, বিনোদন নির্ভরতা থেকে সরে এসে প্রায়োগিক দিকটিতে মনোযোগ দিতে হবে। মানুষ যেন তার নিত্যদিনের প্রয়োজন বাংলা ভাষায় প্রযুক্তির মাধ্যমে সারতে পারেন। দ্বিতীয়ত, সবার হাতে ডিভাইস পৌঁছে দিতে তা আরও সাশ্রয়ী হতে হবে। বাংলাদেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদিত হলেও দাম কিন্তু এখনো সবার নাগালে আসেনি। এ ব্যাপারে অন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, সে ব্যাপারে সংশিষ্ট সবাইকে ভাবতে হবে। তৃতীয়ত, বাংলা ভাষায় সার্চ দিয়ে কনটেন্টের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, হাতে কলমে বাংলায় কারিগরি শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিগরিরই আমরা আরও একটি প্রকল্প হাতে নেব। প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহারকে সহজলভ্য করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে।
সমাপনী বক্তব্যে রিয়াজ রশীদ বলেন, প্রযুক্তিতে বাংলাকে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, যেন মানুষ তা সহজে বুঝতে ও ব্যবহার করতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ