ঢাকা: বঙ্গবিডি, বায়োস্কোপ, টফি, হৈচৈ, বিং, চরকির মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মত প্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সাম্প্রদায়িকতার মতো ইস্যুতে নিয়ন্ত্রণেরও প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
শনিবার (১৩ আগস্ট) মতিঝিলে এফবিসিসিআই অডিটরিয়ামে ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য সংক্রান্ত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য নীতিমালা তৈরি করতে হাইকোর্ট দুই মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। দুই মন্ত্রণালয় কেন, সেই প্রশ্ন তুলে মোস্তাফা জব্বার বলেন, সম্প্রচার মাধ্যমের দায়িত্ব তথ্য মন্ত্রণালয়ের। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে রেডিও কিংবা টেলিভিশনের অনুমোদনের পর তা চালানোর জন্য স্পেকট্রাম আমাদের কাছে নিতে হয়। আসলে দুই মন্ত্রণালয় থেকেই কাজটা করতে হবে।
তিনি বলেন, নীতিমালায় যে সব জায়গায় পরিবর্তন করা প্রয়োজন সে সব জায়গায় পরিবর্তন করা হবে। তবে মতামতের জন্য যেটুকু রেস্ট্রিকশন রাখা প্রয়োজন তাও করবো।
মন্ত্রী বলেন, আমি স্বাধীনতা বুঝি কিন্তু উলঙ্গ স্বাধীনতা বুঝি না। আমার রাষ্ট্র নিয়ে কেউ কথা বলবে, আমার বঙ্গবন্ধু নিয়ে কথা বলবে— এটা হতে দিতে পারবো না। সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কথা বলবে, আমি মনে করি সাম্প্রদায়িকতা রোখার জন্য যা প্রয়োজন তাই করবো।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন বলেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো তথ্য মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসি থেকে রেগুলেট করা হলেও এখানে কোনো ওভারল্যাপিং নেই। দুই মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট কাজ করবে।
সেমিনারের শুরুতে এফিবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো বিনোদনের মাধ্যম ছাড়াও অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে দেখা দিয়েছে। কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে নিজস্ব সংষ্কৃতি যেন হারিয়ে না যায়। পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এফবিসিসিআই’র ডিরেক্টর সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অর্থ উপার্জনের পথ এবং দেশীয় সংষ্কৃতি বিকাশের মাধ্যম। আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য একটি কমন নীতিমালা তৈরি করতে হবে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোকে টকশো এবং কনটেন্ট তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়নি, এই অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এমন নীতিমালা তৈরি করা যাবে না, যাতে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে তা মত প্রকাশের বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
প্যানেল আলোচনায় বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, হাইকোর্ট থেকে ওটিটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়েছে। খসড়া নীতিমালা ৬১টি সংস্থা মতামত দিয়েছে। এখানে আলাদা করে জরিমানার বিধান রাখা হয়নি, বিটিআরসির বিদ্যমান যে আইন সেখানে জরিমানার বিধান রয়েছে। জরিমানা হলে সে আইন থেকেই করা হবে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কনটেন্টের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে মনিটর করার ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান নাসিম পারভেজ।
প্রসঙ্গক্রমে নাসিম পারভেজ বলেন, ফেসবুককে এখানে দায়িত্ব নিয়ে বিজনেস করতে হবে এবং বাংলাদেশে তাদের অফিস স্থাপন করতে হবে। এছাড়া দুটি যোগাযোগের নম্বর দিতে হবে যাতে বিটিআরসি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যোগাযোগ করতে পারে। কিন্তু ফেসবুক প্রতিটি ক্ষেত্রেই বলে আমাদের হাইকোর্টের আদেশ এনে দেন, আমরা সেটা কোথায় পাবো?
আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান বলেন, দেশে বর্তমানে চার কোটি ৯০ লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। প্রত্যেকেরই এখানে অফিস থাকতে হবে। কারণ, আমরা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি। তৃতীয় পক্ষ অন্য দেশ থেকে কনটেন্ট স্ট্রাইক করে দিচ্ছে। এতে আমাদের সাময়িক ক্ষতি হলেও তা রোধ করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য আইন না থাকলে হবে না, কারণ যখন কোনো গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তা দেখছি ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যেমনটা দেখেছি, তেমন যেন না হয়।
বঙ্গবিডির কো-ফাইন্ডার ও ডিরেক্টর নাভিদুল হক বলেন, পৃথিবীতে বাংলাদেই একটা ইউনিক দেশ, যেখানে দুটি রেগুলেটর। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে, রেগুলোটর শুধু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নয়, বিজনেস করার জন্য।
প্যানেল আলোচনায় মেটা বাংলাদেশের হেড অব পাবলিক পলিসি সাবনাজ রশিদ দিয়া, এশিয়া ইন্টারনেট কোয়ালিশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জেফ পেইন ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ