ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিতে সচেতন হওয়ার আহ্বান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২
নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিতে সচেতন হওয়ার আহ্বান

ঢাকা: ইন্টারনেট ছাড়া এক মুহূর্ত এখন চলে না আমাদের। পড়াশোনা ও কাজের পাশাপাশি বিনোদনের অন্যতম মাধ্যমও এখন ইন্টারনেট।

কিন্তু ইন্টারনেটে আমরা সবাই কি নিরাপদ? মোটেও তা নয়।

সবাইকে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার বিষয়ক সেমিনার।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারের আয়োজন করে কম্পিউটার ও ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র 'উইমেন ইন ডিজিটাল' এবং 'উইমেন ইন সাইবার সিকিউরিটি'। আয়োজনে সহযোগিতা করে ইউএনডিপি, টেকভিশন২৪, এবং বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।

ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা আফরোজ লাকী, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের নিউজরুম কো-অর্ডিনেটর শারমীনা ইসলাম, কম্পিউটার ও ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র 'উইমেন ইন ডিজিটাল'-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আছিয়া নীলা, প্রোগ্রাম হোস্ট নওশীন ইসলাম ন্যায়না, টিম লিডার মৌমিতা মাহফুজ, অর্গানাইজার কুহেলিকা রায় পূজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের অর্গানাইজার খাদিজা আক্তার ঊর্মি।

সেমিনারে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন-এর কার্যক্রম তুলে ধরেন ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা আফরোজ লাকী। তিনি বলেন, সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন পরিষেবাটি নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগ গ্রহণ করে এবং অভিযোগকারীদের প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রযুক্তিগত ও আইনি পরামর্শ দিয়ে থাকে। সাইবার বুলিং, ট্রলিং, পরিচিতি তথ্য অপব্যবহার ও প্রকাশ, ব্ল্যাকমেইলিং, রিভেঞ্জ পর্নোসহ বিভিন্ন উপায়ে সাইবার স্পেসে যত হয়রানির ঘটনা ঘটে তার প্রধান শিকার হন নারীরা। ভুক্তভোগী নারীরা অধিকাংশ সময় বুঝতে পারেন না কীভাবে, কী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং কাকে বিষয়টি জানাবেন। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারকে জানাতে বা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তার কাছে তারা অভিযোগ জানানোর ব্যাপারে দ্বিধাবোধ করেন।



এমন নারীদের পাশে দাঁড়াতে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন কাজ করছে। সাইবার স্পেসে নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে প্রযুক্তিগত ও আইনি সহায়তা দেওয়া এবং সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এ সেবার মূল উদ্দেশ্য। তথ্যানুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয় এবং এরপর সংশ্নিষ্ট পুলিশ ইউনিটের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে ভুক্তভোগীকে সহায়তা দেওয়া হয় বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা আফরোজ লাকী।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের নিউজরুম কো-অর্ডিনেটর শারমীনা ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধু নির্বাচনে সচেতন হতে হবে। কারও বিষয়ে ভালো করে জানা না থাকলে তাকে বন্ধুর তালিকায় স্থান না দেওয়াই ভালো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত বা অপরিচিত কাউকেই একান্ত ব্যক্তিগত কোনো তথ্য, ছবি বা ভিডিও পাঠানো থেকে বিরত থাকতে হবে। এসব তথ্য বা ভিডিও সংগ্রহ করে ব্যবহারকারীদের বিপদে ফেলতে পারে পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তিরা। এছাড়া আপনি জীবনে অনেক কিছু পেয়েছেন, অনেক কিছু হয়েছেন। কিন্তু আপনার এ আনন্দ বা প্রাপ্তির সঙ্গে যদি পরিবার না থাকে তা হলে এ প্রাপ্তির আনন্দ কোথায়? একটি মানুষ যত বড়ই হোক না কেন তার সম্পূর্ণ আশা-ভরসার কেন্দ্র থাকে পরিবার। পরিবারের সুখ-দুঃখ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। পরিবারের সুখই হচ্ছে প্রকৃত সুখ। তাই মোবাইলে বা ইন্টারনেটে সময় দেওয়া কিছুটা কমিয়ে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। তাতে একদিকে যেমন আপনি ভালো থাকবেন তেমনি ইন্টারনেটের ঝুঁকিও কমবে।

'উইমেন ইন ডিজিটাল'-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আছিয়া নীলা বলেন, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে সচেতনতা। নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ‘অনলাইন নিরাপত্তা’র বিষয়ে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন। কম্পিউটার, স্মার্টফোন ব্যবহারের করলেও ইন্টারেনট ব্যবহারে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। অনলাইনে অনেক ওয়েবসাইটে বা অ্যাপ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে। এ জন্য অপরিচিত ওয়েবসাইট বা অ্যাপস ব্যবহার না করাই ভালো। লটারি বা বিভিন্ন পুরস্কারের প্রলোভনে পাঠানো ই-মেইল বা বার্তা খোলা যাবে না। একটি বিষয় মনে রাখলে ভালো হয়, অনলাইনে নানা ধরনের পুরস্কারের প্রলোভন দিয়ে মূলত ব্যবহারকারীদের যন্ত্রে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস পাঠিয়ে সাইবার হামলা চালানো হয়ে থাকে।

এছাড়া প্রয়োজন শেষ হলে অবশ্যই মুঠোফোনের ব্লুটুথ ও জিপিএস ফিচারটি বন্ধ রাখতে হবে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের অবস্থান অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছে প্রকাশ হয়ে যায়। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার ও তিন থেকে ছয় মাস পর পরিবর্তন করা উচিত। কম্পিউটার, মুঠোফোনের পাশাপাশি ই-মেইল ও সামাজিক যোগাযোগের সাইটের জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। আমরা অনেকেই ঘরে বা বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লগইন থাকা অবস্থায় কম্পিউটার বা মুঠোফোন চালু রেখে বিভিন্ন কাজ করি। এতে তথ্য চুরির পাশাপাশি পাসওয়ার্ড বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, বলেন 'উইমেন ইন ডিজিটাল'-এর প্রধান নির্বাহী।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হতে হবে সচেতন। সচেতন হলেই ভার্চ্যুয়াল জগতের বিপদ, হয়রানি থেকে মুক্তি মিলবে এবং নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট-সেবা গ্রহণ করা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।