নতুন নির্বাচনের আহ্বান ও গ্রেফতার হওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্টিলোর মুক্তির দাবি ছড়িয়ে পড়েছে পেরুর সর্বত্র। প্রতিদিনই দেশটিতে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট কাস্টিলোর অভিশংসন ও গ্রেফতারের বিরুদ্ধে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) পেরুর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আরেকুইপাতে বিমানবন্দরের রানওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। সেখানে তারা টায়ার জ্বালিয়ে, কাঠ-পাথর ফেলে আন্দোলন করেন। একই পরিস্থিতি দেখা যায় কাজামারকা, আরেকুইপা, হুয়ানকায়ো, কুসকো এবং পুনোসহ পেরুর অভ্যন্তরীণ শহরগুলোতেও।
এদিকে, চলমান বিক্ষোভে দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়েছে, গত রোববার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আন্দাহুয়াইলাসে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত ও অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যেরও মৃত্যু হয়েছে। তবে পেরুর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আলবার্তো ওতারোলা আইন প্রণেতাদের বলেছেন, বিধায়কদের মতে আন্দাহুয়াইলাসহ রাজ্যে একজন নিহত হয়েছেন। সোমবার আরেকুইপায় শহরে বিক্ষোভের সময় নিহত হন একজন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা গুলতি ছোঁড়ে, পাথর নিক্ষেপ করে। বাধ্য হয়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাদের দিকে গুলি ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
পেরুর ন্যায়পাল অফিসের প্রধান এলিয়ানা রেভোলারও একই কথা বলেন। তিনি জানান, ১৫ ও ১৮ বছর বয়সী দুজন নিহত হয়েছেন। সম্ভবত গুলির আঘাতে তাদের মৃত্যু হয়।
এদিকে পেদ্রো কাস্টিলোকে অভিশংসন করে অপসারণ করার পর পেরুর প্রেসিডেন্ট পদে বসা দিনা বোলুয়ার্ট আগাম নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন। তারপরও সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে পেরুর উত্তরাঞ্চলীয় ও আন্দিয়ান শহরগুলো বেশি বিক্ষোভ হচ্ছে।
এ অবস্থায় বিক্ষোভ থামিয়ে নাগরিকদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সোমবার তিনি নতুন একটি আইনের কথা জানান। দিনা বোলুয়ার্ট বলেন, আমি ২০২৪ সালের এপ্রিলে সাধারণ নির্বাচন এগিয়ে আনার জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে একটি বিল পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী দিনগুলো এ আইন প্রবর্তন করা হবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্টিলোর ক্ষমতার মেয়াদ ছিল ২০২৬ পর্যন্ত। তবে দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আইনসভা অবৈধভাবে বন্ধ করার প্রচেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিল বিরোধী দলসহ অন্যান্যরা। এমনকি তার ভাইস প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্টও এই উদ্যোগকে অভ্যুত্থান হিসেবে উল্লেখ করে বিরোধিতা করেছিলেন।
কাস্টিলোর গ্রেফতারের পরপরই পেরুজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। গতকাল সোমবার নিজের টুইটার হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি একটি গণপরিষদ গঠনের আহ্বান জানান। টুইটে তিনি পদত্যাগ করবেন না এবং দিনা বোলুয়ার্টকে ‘অধিগ্রহণকারী’ বলে মন্তব্য করেন। এও লেখেন, জনগণ যেন তার নতুন নির্বাচনের নোংরা খেলায় না পড়ে।
একই পোস্টে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন কাস্টিলো। অপমান, যোগাযোগ করতে না দেওয়া ও দুর্ব্যবহার করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
খবরে বলা হয়েছে, অন্যান্য শহরের চেয়ে রাজধানী লিমায় বিক্ষোভ হচ্ছে বেশি। আইনসভা প্রাসাদ ও আশপাশের এলাকা ঘিরে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছে। সেখানে দাঙ্গা পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। সব মিলিয়ে পেরুর অবস্থায় সঙ্কটাপন্ন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো অ্যাঙ্গুলো বলেছেন, নাগরিক অস্থিরতা মূল্যায়ন ও কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে তা নির্ধারণ করতে বোলুয়ার্টের নবনিযুক্ত মন্ত্রিসভা রোববার রাতে বৈঠক করেছে।
এ বৈঠকের পর বোলুয়ার্তে উচ্চ সংঘর্ষের আশঙ্কায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্ট। প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীকেও জরুরি পদক্ষেপ বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগাতে পারেন তিনি। এ ব্যাপারে দিনা বলেন, আমি নির্দেশ দিয়েছি যাতে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ শান্তিপূর্ণভাবে পুনরুদ্ধার করা যায়। জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো যাতে প্রভাবিত না হয়, সেটিও আমরা দেখবো। এ সময় আপুরিম্যাকে ঘটে যাওয়া মৃত্যুর জন্য দুঃখ প্রকাশও করেন তিনি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পেরুর কর্তৃপক্ষকে ‘বিক্ষোভের বিরুদ্ধে অত্যধিক শক্তি প্রয়োগ বন্ধ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে’ আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০২২
এমজে