যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফা ধমকানোর পুরোনো রুটিন বন্ধ করতে বলেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। একইসঙ্গে দেশটিকে ‘সীমা লঙ্ঘন’ না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে ওয়াং এ কথা বলেন।
এসময় তিনি দেশটির বিরুদ্ধে চীনের উন্নয়নকে দমন চেষ্টার অভিযোগ তোলেন।
এদিন আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিজেদের উন্নয়নের পথে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিবন্ধকতা মনে করছে চীন। এমনকি এ নিয়ে অভিযোগ তোলার সঙ্গে টেলিফোনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘সীমা লঙ্ঘন’ না করার বিষয়ে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ওয়াং ই।
ওয়াং শুক্রবার টেলিফোনে ব্লিঙ্কেনকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তার ‘একতরফা ধমকানোর পুরানো রুটিন’ বন্ধ করতে হবে। ওয়াশিংটনকে অবশ্যই বেইজিংয়ের বৈধ উদ্বেগের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। সেইসঙ্গে ‘সালামি স্লাইসিং’ (প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে বিশাল এলাকা দখল করা) কৌশল ব্যবহার করে চীনের সীমা রেখাকে চ্যালেঞ্জ করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সাবধান থাকতে হবে।
ওয়াংয়ের এই মন্তব্যে বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে গভীর উত্তেজনার আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের নেতাদের পুনরায় কূটনীতিতে জড়ানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
গত মাসেই ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, যেখানে তারা তাইওয়ানসহ বেশ কয়েকটি হট-টপিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। যা ছিল ২০১৭ সালের পর তাদের প্রথম ব্যক্তিগত বৈঠক।
চীন তাইওয়ানকে তার নিজস্ব ভূখণ্ড বলে মনে করে এবং বিশ্বাস করে যে, যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে তার মূল স্বার্থ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে তারা একটি একক কঠোর পদক্ষেপ এড়াতে সতর্ক থাকার পাশাপাশি চীনের মূল সীমাকে চ্যালেঞ্জ করছে, যাতে চীন পূর্ণ শক্তি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।
বাইডেন সে সময় চীনের ‘তাইওয়ানের প্রতি জবরদস্তিমূলক এবং ক্রমবর্ধমান আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ’ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। তিনি অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, তাইওয়ান প্রণালী এবং বিস্তৃত অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে এবং বৈশ্বিক সমৃদ্ধি বিপন্ন করছে।
শি এটিকে ‘ফার্স্ট রেড লাইন’ বা ‘প্রথম সীমারেখা’ বলে অভিহিত করেছেন, যা চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে অতিক্রম করা উচিত নয়।
শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওয়াং জোর দিয়েছিলেন যে, দুই পক্ষেরই উচিৎ দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বালি ঐকমত্যকে ব্যবহারিক নীতি এবং সুনির্দিষ্ট কর্মে রূপান্তরিত করার দিকে মনোনিবেশ করা।
ওয়াং বলেন, ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্রের পথপ্রদর্শক নীতির বিষয়ে পরামর্শ বাড়াতে হবে। সম্পর্ক মানে সকল স্তরে সংলাপকে উন্নীত করা এবং যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সুনির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান বের করা। ’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেছে যে, ব্লিঙ্কেন ওয়াংয়ের সঙ্গে ফোন কলে ‘যোগাযোগের উন্মুক্ত মাধ্যম বজায় রাখা এবং দায়িত্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক পরিচালনার প্রয়োজন’ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
এসআইএ/এনএস