সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার সুপারিশ করেছে দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেসের তদন্ত কমিটি।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিতে হওয়া ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় ট্রাম্পের উসকানির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি তদন্ত কমিটির।
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনের দাঙ্গা তদন্তে কংগ্রেসের গঠিত কমিটি শুক্রবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেখানেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার সুপারিশ করা হয়েছে।
৬ জানুয়ারি প্যানেল বলেছে, ট্রাম্পকে আবার অফিসে থাকতে বাধা দেওয়া উচিত। কারণ ৬ জানুয়ারির সহিংসতার কারণ একজন ব্যক্তি। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যাকে সেদিন অনেকেই অনুসরণ করেছিলেন। তিনি (ট্রাম্প) ছাড়া ৬ জানুয়ারির কোনো ঘটনাই ঘটত না।
প্যানেলের ৮৪৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উপস্থাপিত প্রমাণগুলির মধ্যে ছিল, নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার লক্ষ্যে রাজ্য বা স্থানীয় কর্মকর্তাদের চাপ দিতে ৬৮টি মিটিং হয়েছিল অথবা ফোন কল বা টেক্সটবার্তা দেওয়া হয়েছিল।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনের রাতে মিথ্যাভাবে বিজয় ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত এবং বেআইনিভাবে ভোট গণনা বন্ধ করার আহ্বান জানানো স্বতঃস্ফূর্ত সিদ্ধান্ত ছিল না। এটা পূর্বপরিকল্পিত ছিল।
কমিটি আরও বর্ণনা করেছে যে, কীভাবে ট্রাম্প তার প্রচারাভিযান এবং রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহে ২৫০ মিলিয়নেরও বেশি ডলার সংগ্রহ করতে নির্বাচন চুরি করা হয়েছিল বলে দাবি করেছিল।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জো বাইডেন। পরাজিত হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে আসছিলেন ট্রাম্প।
এমনকি নির্বাচন বাতিলের দাবিতে রাজধানী ওয়াশিংটনসহ একাধিক অঙ্গরাজ্যের আদালতে কয়েকটি মামলাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেসবের তিনি পরাজিত হন তিনি।
এসব বিষয় উল্লেখ করে তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান বেনি থম্পসন বলেন, ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র এমন অবস্থানে নেই যেখানে যাবতীয় গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোনো একজন পরাজিত প্রেসিডেন্ট যা খুশি তা করবেন এবং সংঘাত উসকে দেবেন। আমরা সেই অবস্থান থেকে অনেক অনেক দূরে সরে এসেছি। ’
সেই সঙ্গে চরমপন্থী কোনো ব্যক্তি বা তার সমর্থকরা যে নির্বাচনে প্রার্থী না হতে পারে, সেজন্য দেশের নির্বাচনী আইন সংস্কার করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল ভবনে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করতে এক যৌথ অধিবেশনে বসেছিলেন ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিক পার্টি আইন প্রণেতারা।
এদিন ভোরে হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক ‘আমেরিকাকে বাঁচাও’ নামের একটি গণজমায়েত কর্মসূচিতে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে আসেন।
ট্রাম্প ওই জনসভায় ভাষণ দিয়ে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদন প্রক্রিয়া রুখে দিতে ভক্ত-সমর্থকদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বানও জানান।
তার বক্তব্যের দুই ঘণ্টার মধ্যে সমাবেশস্থল থেকে একটু দূরে একটু দূরে কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল হিল ভবনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে ক্যাপিটল হিলের ভেতর ঢুকে তাণ্ডব শুরু করেন ট্রাম্প সমর্থকরা।
সেদিন তাণ্ডবে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ জন নিহত হন, এবং আহত হন আরও ১৪০ জন।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট