ব্রিটিশ অভিযাত্রী, বাবা ও তার ছেলে, দুঃসাহসিক সিইও এবং ‘মিস্টার টাইটানিক’ নামে পরিচিত ফরাসি পাইলট। একেক জন একেক জায়গার হলেও তাদের লক্ষ্য ছিল একটি।
স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে গত রোববার সাবমেরিন টাইটানে রওনা হয়েছিলেন এই পাঁচজন। যাত্রা শুরুর ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পরই তারা নিখোঁজ। অবশেষে আটলান্টিকের মহা তলদেশে ‘বিপর্যয়কর বিস্ফোরণে’ এই পাঁচজনের কেউই বেঁচে নেই বলে জানিয়েছে মার্কিন কোস্ট গার্ড।
টাইটানের এই অভিযাত্রীদের মৃত্যুতে শোক দুঃখ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মানুষ ও সংগঠন।
এক বিবৃতি এক্সপ্লোরার্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড গ্যারিয়ট ডি কেয়েক্স বলেছেন, ‘আমাদের হৃদয় ভেঙ্গে গেছে’।
স্টকটন রাশ
ওশেনগেটের প্রধান নির্বাহী ৬১ বছর বয়সী স্টকটন রাশ।
তিনি চেয়েছিলেন টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ বিজ্ঞানী এবং দর্শনার্থীদের কাছে আরও পরিষ্কার করে তোলার।
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ছাত্র ছিলেন রাশ। ওশেনগেটের ওয়েবসাইটে দেওয়া তার জীবনী অনুসারে, ১৯৮১ সালে তিনি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ জেট ট্রান্সপোর্ট-রেটেড পাইলট হয়েছিলেন। ১৯ বছর বয়সে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স জেট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ক্যাপ্টেন হয়েছিলেন।
প্রথমদিকে মহাকাশে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে রাশ অনুভব করেন, যেখানে আগে কেউ যাননি সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা একমাত্র গভীর সমুদ্রে যাওয়ার মাধ্যমে পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
হামিশ হার্ডিং
তিনি হলেন একজন ব্রিটিশ টাইকুন। ব্রিটিশ অ্যাভিয়েশন টাইকুন হামিশ হার্ডিং এমন একজন অভিযাত্রী যিনি বিমান চালনায় উৎসাহী। বিভিন্ন অভিযানে তার অতি আগ্রহ।
অ্যাকশন অ্যাভিয়েশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে হামিশ হার্ডিং বিশ্বজুড়ে অসংখ্য রেকর্ড-ব্রেকিং ফ্লাইট এবং অভিযান পরিচালনা করেছে ও নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নামিবিয়া থেকে চিতাগুলিকে ভারতে স্থানান্তরিত করার জন্য মিশন চিতাতেও জড়িত ছিলেন।
৫৮ বছর বয়সী একজন উৎসাহী অভিযাত্রী ছিলেন হার্ডিং। তার গভীর সমুদ্র অনুসন্ধানের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল।
২০২১ সালে সাগরের গভীরতম অংশ মারিয়ানা ট্রেঞ্চের চ্যালেঞ্জার ডিপের সমুদ্রের তলদেশে রেকর্ড ৪ ঘণ্টা এবং ১৫ মিনিট কাটিয়েছেন হার্ডিং। সেই অভিযানে তিনি সমুদ্রের গভীরতম অংশ বরাবর দীর্ঘতম দূরত্ব ভ্রমণের রেকর্ডও গড়েছিলেন।
পল হেনরি নারজিওলেট
৭৭ বছরের পল হেনরি নারজিওলেট এই অভিযানের নেতৃত্বের দায়িত্ব ছিলেন। তবে, ফরাসি নৌবাহিনীর প্রাক্তন ডুবুরি নারজিওলেটের আরও একটি পরিচয় রয়েছে।
অনেকেই তাকে ‘মিস্টার টাইটানিক’ বলে ডাকেন। টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ৭৫ বছর পর ১৯৮৭ সালে প্রথমবার এই জাহাজের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ চালানো হয়। সেই অভিযানেরও সদস্য ছিলেন এই ফরাসি ডুবুরি।
নারজিওলেট ফ্রান্সের চ্যামোনিক্সে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আফ্রিকায় তার পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেছিলেন। ই/এম গ্রুপের ওয়েবসাইটে দেওয়া তার জীবনী অনুসারে, তিনি ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে ২২ বছর কাটিয়েছেন।
শাহজাদা ও সুলেমান দাউদ
এই সাবমেরিনে ছিলেন ৪৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সুলেমান দাউদ। পাকিস্তানের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলোর একটি এই দাউদ পরিবার।
শাহজাদা পাকিস্তানি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান এনগ্রো কর্পোরেশনের ভাইস-চেয়ারম্যান। এটি একটি বড় সার ফার্ম। পরিবারের দাউদ ফাউন্ডেশনের সাথে কাজ করেন, একই সাথে এসইটিআই নামের- একটি ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক গবেষণা সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন যা বহির্ভূত প্রাণের সন্ধান করে।
শাহজাদা রাজা চার্লস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দুটি দাতব্য সংস্থা ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট এবং প্রিন্স ট্রাস্ট ইন্টারন্যাশনালেও সাহায্য করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া ও ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব বাকিংহ্যামে পড়াশোনা করেন শাহজাদা। সেখানে ১৯৯৮ সালে তিনি গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৩
এমএইচএস