ঢাকা: খালিস্তানপন্থি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভারত-কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্কে এখন চরমভাবে টানাপোড়েন চলছে। আর এই টানাপোড়েনের মধ্যেই দিল্লির পাশে থাকার ইঙ্গিত দিলো ঢাকা।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলার মধ্যেই খালিস্তানপন্থি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভারত-কানাডা সম্পর্কে চরম টানাপোড়েন শুরু হয়। আর এই ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে গণমাধ্যমের সঙ্গে যে কথা বলেছেন, এতে দিল্লির পাশেই থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ড. মোমেন বলেছেন, ভারতের জন্য বাংলাদেশ খুবই গর্বিত, কারণ তারা অপরিপক্ক কিছু করে না। সেই সঙ্গে বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানও আশা করেন তিনি। ভারতের বিরুদ্ধে কানাডার সরকারের অভিযোগকে ‘দুঃখজনক পর্ব’ উল্লেখ করে ড. মোমেন আশা প্রকাশ করেন, বন্ধুত্বপূর্ণভাবে বিষয়টির সমাধান করা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, এটা খুবই দুঃখজনক। আমি ঘটনার বিস্তারিত জানি না, সেজন্য আমি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে পারি না। কিন্তু আমরা ভারতকে নিয়ে খুবই গর্বিত; কারণ তারা অপরিপক্ক কিছু করে না। ভারতের সঙ্গে আমাদের খুবই দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। সেটা মূল্যবোধ ও নীতির ওপর ভিত্তি করে গঠিত।
এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। সে সময় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জাস্টিন ট্রুডোর:
কানাডায় খালিস্তানপন্থি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সম্প্রতি ভারতকে কাঠগড়ায় তোলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, কানাডার নাগরিক নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের এজেন্টদের জড়িত থাকার প্রমাণ তারা পেয়েছেন। তবে ট্রুডোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই অভিযোগ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়। এই ঘটনার জেরে দুই দেশের কূটনীতিককে বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া কানাডার নাগরিকদের ভিসাও বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।
বিদেশে বসেই খালিস্তান আন্দোলন:
১৯৮০ সালে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশ ঘিরে শিখদের একটি অংশ খালিস্তানের দাবি তোলে। পরে সেই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে ভারতে খালিস্তান আন্দোলন স্তিমিত হলেও বিদেশের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত শিখ সম্প্রদায়ের একটি অংশ সেই দাবি অব্যাহত রাখে। বিশেষ করে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে শিখ সম্প্রদায়ের একটি অংশ এখনও সেই দাবির পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। তবে এই দেশগুলোকে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে আসছে ভারত।
কানাডায় ভারতীয়দের প্রভাব:
কানাডায় আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী অন্যান্য দেশ থেকে আসা মোট অভিবাসীর ১৮.৬ শতাংশ ভারতীয়। ভারতের পর কানাডাতেই শিখ ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তারা সেখানকার মোট জনসংখ্যার ২.১ শতাংশ।
শুধু তাই নয়, ২০১৮ সাল থেকে কানাডায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভারত থেকে যায়।
কে এই হরদীপ সিং নিজ্জার:
কানাডার নাগরিক ও ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন খালিস্তান টাইগার ফোর্স-কেটিএফ প্রধান হরদীপ সিং নিজ্জারকে গত ১৮ জুন গুলি করে হত্যা করা হয়। তাকে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের পাঞ্জাবি অধ্যুষিত শিখদের ধর্মীয় উপাসনালয়ের পার্কিংয়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ৪৬ বছর বয়সী নিজ্জার পাঞ্জাবের জলান্ধরে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি দীর্ঘদিন কানাডায় অবস্থান করছিলেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তাকে খুঁজছিল ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। তার মাথার দাম ১০ লাখ রুপি ঘোষণা করেছিল নয়াদিল্লি। তাকে ‘জঙ্গি’ হিসেবেও ঘোষণা করে ভারত। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে ইন্টারপোল রেড কর্নার নোটিশ- আরসিএন জারি করা হয়েছিল। নিজ্জারের বিরুদ্ধে এক ডজনেরও বেশি ফৌজদারি মামলা, খুন এবং অন্য সন্ত্রাসমূলক কাজে যোগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ভারত সরকার তাকে ফেরত দেওয়ার দাবি করলেও কানাডা সরকার সাড়া দেয়নি। তাকে ফেরত না দিয়ে শুধু ‘নো-ফ্লাই লিস্টে’ নাম রেখেছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
টিআর