ওমর এ. নামে এক ফিলিস্তিনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত থেকে রক্ষা করেছে তুরস্কের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি। মালয়েশিয়ায় মোসাদের এজেন্টরা তাকে অপহরণ করলে মালয় পুলিশের সাহায্যে ওমরকে উদ্ধার করে এমআইটি।
মোসাদের ধারণা, ওমর ২০১৫-১৬ সালে ইসরায়েলি আয়রন ডোম সিস্টেমকে হ্যাক করে হামাসের আল-কাসাম ব্রিগেডকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালাতে সাহায্য করেছিলেন।
ওমর গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে স্নাতক করেছেন। তিনি গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি হ্যাকিং সফটওয়্যার তৈরি করেছিলেন, যেটি দিয়ে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং ফোনে অনুপ্রবেশ করা যায়।
আয়রন ডোম সিস্টেম হ্যাক হওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে নেমে তিন বছর পর ওমরের ব্যাপারে জানতে পারে মোসাদ। তখন থেকেই তাকে টার্গেট হিসেবে তালিকায় রাখে তারা।
২০১৯ সালে তাকে প্রলুব্ধ করার জন্য একটি নরওয়েজিয়ান সফটওয়্যার কোম্পানির মাধ্যমে চাকরির প্রস্তাব দেয় মোসাদ। কিন্তু ওমর ওই কোম্পানির সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পৃক্ততা আঁচ করতে পেরে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন।
২০২০ সালে ওমর ইস্তাম্বুল চলে যান। কিন্তু তুরস্কেও মোসাদ তার পিছু নেয়। হ্যাকার হিসেবে তার পরিচিতির কারণে এমআইটিও তুরস্কে তার বাসস্থান সম্পর্কে সচেতন ছিল। ২০২১ সালের এপ্রিলে রাইদ গজল নামে একজন মোসাদ এজেন্ট নিজেকে ফরাসি কোম্পানি থিঙ্ক হায়ারের কর্মকর্তা দাবি করে আবারও ওমরকে চাকরির প্রস্তাব দেন। গজলের পরে ওমর শালাবি নামে আরেক মোসাদ অপারেটর ফরাসি কোম্পানির পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি তাদের জন্য কোডিং সফটওয়্যার বানাতে ওমরকে ১০ হাজার ডলারের প্রস্তাব দেন। পরে ওমর সেই কাজ করে দেন।
২০২২ সালের জুনে নিকোলা রাডোনিজ নাম ব্যবহার করে অন্য এক মোসাদ সদস্য ওমরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ওমরকে ব্রাজিল বা ইস্তাম্বুলে চাকরির প্রস্তাব দেন। এ সময় তার সঙ্গে আরও তিনজন মোসাদ সদস্য সফটওয়্যার ডেভেলপার সেজে ওমরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা তাদের দলে ওমরকে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান এবং তাদের সঙ্গে বিদেশ সফরের প্রস্তাব দেন। মূলত মোসাদ সদস্যরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দেশ্যে তেল আবিব নিয়ে যাওয়ার ফন্দি আঁটছিল। ওমর তাদের প্রস্তাবে সায় দিতেই যাচ্ছিলেন, কিন্তু এমআইটি তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাকে মোসাদের ব্যাপারে সতর্ক করে।
মোসাদ হাল ছাড়েনি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ওমর মালয়েশিয়ায় ছুটি কাটাতে যান। তখন এমআইটির কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের ইস্তাম্বুল শাখা তাকে অপহরণের আশঙ্কার কথা জানায় এবং তার ফোনে ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ইনস্টল করে দেয়। এর একদিন পরই ওমরকে কুয়ালালামপুর থেকে অপহরণ করে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে একটি দুর্গম এলাকায় একটি কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মোসাদের সদস্যরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করে। এ সময় তেল আবিবের মোসাদ সদস্যরা ভিডিও কলের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদে যোগ দেয়।
কোন পদ্ধতিতে ওমর আয়রন ডোম হ্যাক করেছিলেন এবং অ্যান্ড্রয়েড-ভিত্তিক হ্যাকিং সফটওয়্যার তৈরি করার জন্য তিনি কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন তা জানতে চায় মোসাদ।
এর মধ্যে এমআইটি এই অপহরণের বিষয়ে জানতে পারে। তখনই তারা মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ট্র্যাকিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে ওমরকে কোথায় রাখা হয়েছে তা চিহ্নিত করতে তাদের সাহায্য করে। মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওমরকে উদ্ধার করে। তাকে অপহরণের অভিযোগে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে।
ওমর তুরস্কে ফিরে আসেন এবং এমআইটির একটি সেফ হোমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সংস্থাটি ফোয়াদ ওসামা হিজাজি নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে, যিনি ছিলেন নিকোলা রাডোনিজের সঙ্গে কাজ করা মোসাদের সদস্যদের একজন।
সূত্র: ডেইলি সাবাহ
বাংলাদেশ সময় ১৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২৩
এমএম