ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ক্ষমতায় বসেই যেসব পরিবর্তন আনলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
ক্ষমতায় বসেই যেসব পরিবর্তন আনলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই পুরনো অনেক আইন বাতিল করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া হোয়াইট হাউসে ফিরেই আগের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিয়োগ দেওয়া চার শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন।

একের পর এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।  

ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপের প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে পারে। ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খুব দ্রুত প্রায় অর্ধশত নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতেও।

সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর অভিবাসন থেকে পরিবেশ এবং সরকারি নিয়োগ থেকে নাগরিকত্ব—সব বিষয়ে পরিবর্তন আনেন ট্রাম্প।  

অবশ্য ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় এসব পরিবর্তনের বিষয়ে বলে আসছিলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ তা মেনেই বিপুল ভোটে তাকে জয়ী করে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছেন।

দেড় হাজার বন্দিকে সাধারণ ক্ষমা

ক্ষমতায় বসেই ২০২১ সালে ক্যাপিটলে হামলায় দোষী সাব্যস্ত প্রায় দেড় হাজার জনকে ক্ষমা করেছেন। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির দিন ট্রাম্পের উসকানিতে ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গার ঘটনায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনায় ১৪০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল চারজনের। দাঙ্গার পর ট্রাম্পের বিপুলসংখ্যক সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার কলমের এক খোঁচাতে তাদের মুক্ত করে দেন তিনি।

সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি

সোমবার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন ট্রাম্প। এখন চাইলে সেখানে মার্কিন সেনাদের মোতায়েন করতে পারবেন। এই আদেশের আওতায় অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার একটি প্রকল্পও বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত কর্তৃপক্ষ।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল

সংবিধানের তোয়াক্কা না করে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের একটি বিধানও বাতিল করেছেন ট্রাম্প। এতে এখন থেকে ৩০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানেরা দেশটির নাগরিকত্ব পাবে না। ট্রাম্পের এই আদেশ মার্কিন সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনের বিরুদ্ধে যায়। ১৮৯৮ সালের ওই সংশোধনীতে বলা হয়, মার্কিন ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করা সবাই দেশটির নাগরিকত্ব পাবে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা, চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের উদ্যোগ

নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জলবায়ু–সংকট নিরসনে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ট্রাম্প। এর আগে প্রথম মেয়াদেও একই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরে তা আবার বহাল করেন।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন ট্রাম্প। সংস্থাটিতে সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালের হিসাবে তা মোট অনুদানের ১৮ শতাংশ। সেখান থেকে সরে আসতে চান নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।  

পররাষ্ট্র দপ্তরে ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস

ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর সীমান্ত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র দপ্তরের এক ডজনের বেশি জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে পদত্যাগ করতে বলা হয়। ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, বাইডেন প্রশাসনের নিয়োগ দেওয়া সহস্রাধিক ব্যক্তিকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেবেন তিনি। তার প্রথম প্রক্রিয়ায় সরকারের চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প। তারা হলেন - মার্কিন প্রেসিডেন্টের খেলাধুলা, স্বাস্থ্য-সবলতা ও পুষ্টিবিষয়ক পরিষদের হোসে আন্দ্রেজ, জাতীয় অবকাঠামো উপদেষ্টা পরিষদের মার্ক মিলে, উইলসন সেন্টার ফর স্কলার্সের ব্রায়ান হুক ও রপ্তানিবিষয়ক পরিষদের কেইশা ল্যান্স বটমস।

সোমবার সিনেটের ভোটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মার্কো রুবিও।  

অর্থনীতিবিষয়ক পরিবর্তন ও প্রভাব

সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তার এ খবরেই দরপতন হয়েছে দুই দেশের মুদ্রার। বেড়েছে মার্কিন ডলারের দাম। প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারে।

অভিষেকের দিন পানামা খাল নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন ট্রাম্প। বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ ওই পানিপথের চারপাশে চীনের প্রভাব বাড়ছে এবং চীনই কার্যত পানামা খাল পরিচালনা করছে। ট্রাম্পের এই বক্তব্য ইতোমধ্যে বিশ্ব রাজনীতি-অর্থনীতিতে ধাক্কা দিয়েছে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা দেশের তালিকা থেকে কিউবার নাম সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ আটকে দিয়েছেন ট্রাম্প। ঘোষণা করেছেন মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘আমেরিকা উপসাগর’ রাখার। নতুন মেয়াদের শুরুর দিনে গ্রিনল্যান্ড প্রসঙ্গও তুলেছেন। তিনি বলেন, গ্রিনল্যান্ডের জনগণ ডেনমার্ক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুখী থাকবে।

এছাড়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দিনেই ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি উন্নয়ন সহায়তা স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।

গাজা ও ইউক্রেন ইস্যু

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে আগে থেকেই তৎপর ছিলেন ট্রাম্প। একটি শান্তিচুক্তি নিয়েও আলোচনা শুরু করেছিলেন। এই যুদ্ধ নিয়ে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনে ট্রাম্পের ক্ষমতা হস্তান্তর দলের প্রধান রবার্ট উইলকি বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করে যুদ্ধ থামাতে বলবেন ট্রাম্প। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও ফোন করবেন তিনি।

তবে গাজা ইস্যুতে ট্রাম্পের বক্তব্য হতাশা জাগানোর মতো। হোয়াইট হাউসে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের সময় তিনি বলেন, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে তিনি আশাবাদী নন।  

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।