হামাস-ইসরায়েলের আরেক দফার যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে কাতারে গিয়েছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একটি দল। কিন্তু আলোচনায় ‘অচলাবস্থার’ কারণ দেখিয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করা উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশটি থেকে ওই দলটিকে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) কাতারের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, রাজধানী দোহায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে আরেক দফা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। মোসাদের একটি দল কাতারে পৌঁছেছিল। কিন্তু ইসরায়েল দলটিকে ফিরে যেতে বলেছে।
চুক্তি সম্পর্কিত আলোচনায় অচলাবস্থার কারণে মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া নেতৃত্বাধীন দলটিকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এ ব্যাপারে বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেটিতে বলা হয়েছে, আলোচনায় অচলাবস্থার পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দোহা থেকে ডেভিড বার্নিয়া নেতৃত্বাধীন মোসাদের দলটিকে ফিরে আসতে বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে লেখা হয়, তারা চুক্তির অংশ পূরণ করেনি। হামাসের কাছে একটি তালিকা পাঠানো হয়েছিল। ওই তালিকায় শিশু ও নারীদের মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং হামাস সেটির অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু হামাস তাদের কাছে থাকা সব নারী জিম্মিকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, সিআইএ প্রধান, মিশরীয় গোয়েন্দা বিভাগের মন্ত্রী ও কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে তাদের অসাধারণ মধ্যস্থতা প্রচেষ্টায় অংশীদারিত্বের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া। তাদের কারণে গাজা থেকে ৮৪ জন ইসরায়েলি নারী ও শিশু এবং ২৪ জন বিদেশি নাগরিককে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
গাজায় হামাস-ইসরায়েলের নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে শনিবার দোহায় কাতারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল মোসাদের। তার আগেই নিজেদের প্রতিনিধি দলকে ফিরে আসতে বলল ইসরায়েল।
গত বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি শেষ হওয়ার পর শুক্রবার গাজা উপত্যকায় ফের নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ২৪ ঘণ্টায় গাজায় অন্তত ৪০০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে তারা। এতে অন্তত ১৯৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে; আহত হয়েছে আরও ৬৫২ জন। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। এ ছাড়া লেবাননেও হামলা চালায় ইসরায়েল। এ ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছে।
কাতারের মধ্যস্থতায় নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনায় শুধুমাত্র নারী ও শিশু জিম্মিদের মুক্তি নয়, ইসরায়েলি অন্যান্য জিম্মিদের সম্ভাব্য মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির নতুন শর্তে জোর দিয়েছিল ইসরায়েল। এ ব্যাপারে জানে এমন একটি সূত্র শুক্রবার ভেস্তে যাওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির সাথে নতুন চুক্তির শর্তে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছি। কিন্তু মোসাদকে ফিরিয়ে নেওয়ায় সেটি আর হচ্ছে না বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা ১৫ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। আর আহত হয়েছেন আরও ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় হতাহত ফিলিস্তিনিদের ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২৩
এমজে