হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। রোববার দেশটির পাহাড়ি অঞ্চলে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
রাইসিই প্রথম নন, এর আগেও বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা আকাশপথে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরভিড লিন্ডম্যান, ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট র্যামন ম্যাগসাইসাইয়েও।
আরভিড লিন্ডম্যান, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৬)
সলোমন আরভিড আচেটস লিন্ডম্যান সুইডেনের সাবেক রিয়ার অ্যাডমিরাল এবং দুইবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রভাবশালী রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ। ১৯৩৬ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি মর্মান্তিক এক উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাকে বহনকারী ডগলাস ডিসি-২ উড়োজাহাজটি যুক্তরাজ্যের ক্রয়ডন বিমানবন্দর থেকে ওড়ার পরপরই বিধ্বস্ত হয়।
র্যামন ম্যাগসাইসাই, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট (১৯৫৭)
র্যামন ম্যাগসাইসাই ছিলেন ফিলিপাইনের সপ্তম প্রেসিডেন্ট। দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে তিনি পরিচিত ছিলেন। ১৯৫৭ সালের ১৭ মার্চ তাকে বহনকারী উড়োজাহাজ সি-৪৭ সেবু শহরে মাউন্ট মানুঙ্গালে বিধ্বস্ত হয়। এতে ম্যাগসাইসাই নিহত হন। ওই উড়োজাহাজে থাকা ২৫ যাত্রীর মধ্যে শুধু একজনই বেঁচে ফেরেন।
নেরেউ রামোস, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট (১৯৫৮)
ব্রাজিলের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হন। ১৯৫৮ সালের ১৬ জুন তিনি একটি ক্রুইজারো দো সুল এয়ারলাইনারে ভ্রমণ করছিলেন। পারানা প্রদেশে কুরিতিবা আফোনসো পেনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়।
আব্দুল সালাম আরিফ, ইরাকের প্রেসিডেন্ট (১৯৬৬)
ইরাকের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন, আব্দুল সালাম আরিফ। ১৯৫৮ সালে রাজতন্ত্র উৎখাতের বিপ্লবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৬ সালের ১৩ এপ্রিল ইরাকের বিমান বাহিনীর দে হাভিল্যান্ড ডিএইচ.১০৪ ডাভ উড়োজাহাজ বসরার কাছে বিধ্বস্ত হয়। তার ভাই আব্দুল রহমান আরিফ তার স্থলাভিষিক্ত হন।
হামবার্তো দে আলেনকার কাস্তেলো ব্রানকো, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট (১৯৬৭)
হামবার্তো দে আলেনকার কাস্তেলো ব্রানকো ব্রাজিলের ২৬তম প্রেসিডেন্ট। তিনি দেশটির সাবেক সামরিক শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৬৭ সালের ১৮ জুলাই তিনি নিহত হন। ক্ষমতা ছাড়ার পরপরই তার পাইপার পিএ-২৩ অ্যাজটেক ও ব্রাজিলের বিমান বাহিনীর লকহিড টি-৩৩ উড়োজাহাজের মধ্যে মাঝ আকাশে সংঘর্ষ হয়। এতে তিনি মারা যান। তার মৃত্যু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও বিতর্কে ঘেরা।
সঞ্জয় গান্ধী, ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও কংগ্রেস নেতা (১৯৮০)
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে সঞ্জয় গান্ধী নিহত হন ১৯৮০ সালের ২৩ জুন। দিল্লির সফদরজং বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারালে তার মৃত্যু হয়।
রাশিদ কারামি, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী (১৯৮৭)
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রাশিদ কারামি লেবাননের সবচেয়ে বেশিবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলাকালীন তিনি ছিলেন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। ১৯৮৭ সালের ১ জুন বৈরুত যাওয়ার পথে হেলিকপ্টারে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত হন কারামি।
মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট (১৯৮৮)
জেনারেল মুহাম্মদ জিয়া-উল হক পাকিস্তানের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট। ১৯৮৮ সালের ১৭ আগস্ট তিনি নিহত হন। বাহাওয়ালপুর থেকে ওড়ার পরপরই তার সি-১৩০ হারকিউলিস উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ নিয়ে এখনো রহস্য রয়েই গেছে।
মাধবরাও সিন্ধিয়া, ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও কংগ্রেস নেতা (২০২১)
মাধবরাও সিন্ধিয়া ছিলেন ভারতের প্রতিশ্রুতিশীল একজন রাজনীতিবিদ এবং কংগ্রেস সদস্য। ২০০১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হন। তার ব্যক্তিগত বিক্র্যাফট কিং এয়ার সি৯০ উড়োজাহাজটিতে মাঝ আকাশে আগুন ধরে যায়। উত্তরপ্রদেশের মাইনপুরিতে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়।
সেবাস্তিয়ান পিনেরা, চিলির প্রেসিডেন্ট (২০২৪)
চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি চিলির দক্ষিণাঞ্চলে একটি হ্রদে বিধ্বস্ত হলে তিনি প্রাণ হারান। চিলির রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন সেবাস্তিয়ান পিনেরা। তিনি দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
সূত্র: এনডিটিভি
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৪
আরএইচ