আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বলছে, ইরানের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আছে, তা ২০১৫ সালে বেঁধে দেওয়া পরিমাণের চেয়ে অন্তত ৩০ গুণ বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, ইরানের কাছে বর্তমানে ১৪২ দশমিক ১ কেজি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আছে, যা গত ফেব্রুয়ারিতে থাকা পরিমাণের চেয়ে ২০ কেজি বেশি।
এছাড়াও ইরানের বর্তমানে সামগ্রিকভাবে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ ৬ হাজার ২০১.৩ কিলোগ্রাম। যা গত ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৬৭৫.৮।
জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি প্রধান এবং আইএইএ পরিচালক রাফায়েল গ্রসি গত মাসে সতর্ক করে বলেছিলেন, ইরান যদি পারমাণবিক বোমা তৈরির পথ বেছে নেয় তবে ইরানের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ রয়েছে।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিংকট্যাংক ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্সেস অব ডেমোক্রেসিস'র নন-প্রলিফারেশন অ্যান্ড বায়োডিফেন্সের প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর আন্দ্রেয়া স্ট্রাইকার সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনালকে বলেন, এখন তাদের (ইরানের) কাছে যে পরিমাণ ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আছে, তা দিয়ে প্রায় চারটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।
তিনি বলেন, কোনো দেশ চাইলে এই মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইরানের কাছে সামগ্রিকভাবে ১৩টিরও বেশি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুদ আছে এবং এই ইউরেনিয়ামকে তারা পাঁচ মাসের মধ্যে ওয়েপন-গ্রেড ইউরেনিয়ামে উন্নীত করতে পারবে। এরপর তাদের অন্তত ছয় মাস লাগবে সেই জ্বালানিকে একটি পারমাণবিক বোমায় রূপ দিতে এবং তারপর সম্ভবত এক বছরেরও বেশি সময় লাগবে এটিকে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে স্থাপনে সক্ষম হতে।
তিনি আরও বলেন, একবার ২০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া মানে প্রযুক্তিগত দিক থেকে আপনি বেশিরভাগ কাজ শেষ করে এনেছেন এবং তারপর এটি শুধুমাত্র কয়েক দিনের ব্যাপার। উদাহরণস্বরূপ বলাযায় ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামকে ওয়েপন গ্রেডে উন্নীত করা খুবই কম সময়ের ব্যাপার। এই অবস্থা থেকে একটি বোমার জন্য ওয়েপন গ্রেড ইউরেনিয়াম তৈরি করতে সম্ভবত সাত দিনেরও কম সময় লাগতে পারে।
এই খবরের রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন খবর হল- ইরানের সুপ্রিম লিডারের উপদেষ্টা আলী শামখানিকে নিউক্লিয়ার-নেগোশিয়েটর (ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড বিষয়ক প্রধান আলোচক) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শামখানি একজন পুরানো সামরিক ব্যক্তিত্ব যিনি গত বছর পর্যন্ত ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি পশ্চিমাদের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তির পরিপন্থি ছিলেন বলে ধারণা করা হয় বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর।
ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির চিফ অফ স্টাফ মাহমুদ ভাইজি কদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, শামখানির মেয়াদে সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল পশ্চিমাদের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তিটি পুনরুজ্জীবনে অনাগ্রহী ছিল। তারা সহযোগিতা করলে সেই সময় ( প্রেসিডেন্ট রুহানির মেয়াদে) চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করা যেত।
তাই বলা যায় ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতার প্রশ্নে সামগ্রিক দিক বিবেচনা করলে যে চিত্র পাওয়া যায় তা কোনো অবস্থাতেই ইসরায়েল বা পশ্চিমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা,মে ২৯,২০২৪
এমএম