মরক্কোর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মরুভূমিতে বিরল এক বর্ষণ হ্রদ ও পুকুরগুলোতে জীবন ফিরিয়ে এনেছে। স্থানীয় ও পর্যটকরা এ বৃষ্টিকে বলছেন স্বর্গীয় উপহার।
রাজধানী রাবাত থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বের পর্যটক শহর মারজোগা। সেখানে একসময়ের শুকনো সোনালি বালিয়াড়ি এখন পুকুর ও হ্রদে ছেয়ে গেছে।
পর্যটকদের ইয়াসমিনা হ্রদের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্থানীয় ট্যুর গাইড ইউসুফ এইত চিগা। হ্রদটির অবস্থান মারজোগার বালিয়াড়ির মধ্যেই। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বর্ষণ নিয়ে আমরা অবিশ্বাস্য রকমের খুশি।
খালিদ স্কন্দৌলি নামে আরেক ট্যুর গাইড বলেন, বৃষ্টির কারণে আরও বেশি পর্যটক আসছেন। তাড়া এ অদ্ভুত রূপান্তরের সাক্ষী হতে আসছেন।
ফ্রেঞ্চ পর্যটক ল্যাতিতিয়া শেভালিয়ার প্রায়ই এ অঞ্চলে বেড়াতে আসেন। তিনি বলেন, এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, বৃষ্টি ‘আকাশ থেকে পাওয়া আশীর্বাদ’।
স্থানীয়রা এএফপিকে বলেন, এ জলাধার প্রায় ২০ বছর ধরে শুষ্ক ছিল।
মরক্কোর আবহাওয়া অধিদপ্তরের অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সাল ছিল গত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শুষ্ক, যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪৮ শতাংশ কমেছে।
তবে সেপ্টেম্বরে দেশটির দক্ষিণ দিকে বেশ বৃষ্টিপাত হয়, যাতে ২৮ জনের প্রাণহানি ঘটে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে পার্শ্ববর্তী দেশ আলজেরিয়াও একই ধরনের ভারী বৃষ্টির সাক্ষী হয়েছে। এতে প্রাণ গেছে ছয়জনের।
অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের মতে, পানি-সংকটে থাকা দেশগুলোর তালিকায় উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর অবস্থান শীর্ষে।
মরক্কোর আবহাওয়া সংস্থা সাম্প্রতিক ব্যাপক বৃষ্টিপাতকে ‘ব্যতিক্রমী’ বলে বর্ণনা করেছে।
সংস্থাটির ব্যাখ্যা হলো, আন্তঃগ্রীষ্মমণ্ডলীয় সংযোগ অঞ্চলের একটি অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে এমন বৃষ্টিপাত ঘটেছে। এটি এমন এক কৌশলগত অঞ্চল যেখানে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের বাতাস মিলিত হয়, যা বজ্রপাত ও ভারী বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে।
মরক্কোর জলবায়ু বিজ্ঞানী ফাতিমা দ্রিউচ এএফপিকে বলেন, এসব জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণ নির্দেশ করে। পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা ছাড়া নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যাবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝড়, খরার মতো চরম ঘটনা তীব্রভাবে এবং আরও ঘনঘন ঘটছে।
মরক্কোর দক্ষিণ দিকে এ বৃষ্টিপাত কিছু জলাধার আংশিকভাবে পূর্ণ করতে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই স্তরগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর জন্য বৃষ্টিপাত দীর্ঘ সময় ধরে চলতে হবে।
দেশটির বাকি অঞ্চল টানা ষষ্ঠ বছরের মতো খরায় আচ্ছন্ন। এ খরা সেখানকার কৃষিখাতকে হুমকির মুখে ফেলছে। দেশটির জনশক্তির এক তৃতীয়াংশ এ খাতে নিযুক্ত।
জিন মার্ক বেরহোকোইরিগোইন নামে ফ্রেঞ্চ এক পর্যটক বলেন, ইয়াসমিনা লেক পানিতে পূর্ণ হওয়া দেখে তিনি বিস্মিত। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে আমি এমন দৃশ্য দেখিনি।
এএফপির এই প্রতিবেদক দেখেছেন, মারজোগার ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এরগ জ্নাইগুইয়ের মতো মরু এলাকাগুলোতেও পানি ফিরে এসেছে।
যেখানে বৃষ্টিপাত দেশের দক্ষিণ-পূর্বের শুষ্ক অঞ্চলে প্রাণসঞ্চার করেছে, সেখানে ফাতিমা দ্রিউচ সতর্ক করে বলেন, এক কোনো চরম ঘটনা স্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারে না।
গত সপ্তাহে মরক্কোর আবহাওয়া সংস্থা বলে যে, ‘আংশিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেহেতু আন্তঃগ্রীষ্মমণ্ডলীয় সংযোগ অঞ্চল আরও উত্তরে সরে যাচ্ছে,’ এমন ভারী বৃষ্টিপাত আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৪
আরএইচ