ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘গাজা কোলা’ কোমলপানীয় হাতে শক্ত প্রতিরোধের প্রত্যয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
‘গাজা কোলা’ কোমলপানীয় হাতে শক্ত প্রতিরোধের প্রত্যয়

লন্ডনের হোলবর্নের একটি জনপ্রিয় ফাস্ট ফুড চেইন, হিবা এক্সপ্রেস। এখানেই অবস্থিত প্যালেস্টাইন হাউস, একটি বহুতল ভবন যা প্যালেস্টাইনি এবং তাদের সমর্থকদের জন্য একটি মিলনস্থল।

এর মালিক ও ব্যবস্থাপক ওসামা কাশু, একজন সক্রিয় প্যালেস্টাইনি, যিনি হিবা এক্সপ্রেস এবং প্যালেস্টাইন হাউস চালান।  

হিবা এক্সপ্রেসে প্যালেস্টাইনি ও লেবানিজ খাবার পরিবেশন করা হয়, এবং খাওয়ার টেবিলগুলোর উপর ‘গাজা কোলা’ নামে একটি চেরি-লাল ক্যান দেখা যায়, যা প্যালেস্টাইনি পতাকার কালো, সাদা ও সবুজ রঙে সাজানো।

‘গাজা কোলা’ তৈরির উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এটি তৈরি করার উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি পানীয় তৈরি করা যেন ইজরায়েলি সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে এমন কোম্পানিগুলোকে বয়কট করা যায়। এটি এক ধরনের মুক্তির স্বাদ।  

গাজা কোলার মাধ্যমে কাশু একটি বয়কট আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন যা বড় কোমল পানীয় কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত করবে।  

কোলা প্রস্তুত করার প্রক্রিয়াটি সহজ  ছিল না, কারণ তাকে বিভিন্ন অংশীদারদের পক্ষ থেকে নানা রকম আপসের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি কোনো আপস করেননি।

বর্তমানে লন্ডনের তার তিনটি রেস্তোরাঁ, কিছু মুসলিম খুচরা বিক্রেতার দোকান এবং অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে এই গাজা কোলা । এর লাভ থেকে গাজা সিটির আল-করামা হাসপাতালে মাতৃসদনের পুনর্নির্মাণে সহায়তা করা হচ্ছে।

এছাড়াও, ফিলিস্তিনিদের সমর্থক অন্য কোলার ব্র্যান্ডগুলো, যেমন প্যালেস্টাইন ড্রিঙ্কস (সুইডেন) এবং মেট্রিক্স কোলা (জর্ডান), সাফল্য পেয়েছে এবং বিক্রয় বাড়ছে। কাশু আশা করেন গাজা কোলা পান করে লোকেরা প্যালেস্টাইনের দুর্দশা মনে রাখবে এবং সচেতন হবে।

প্রতিবাদ মিছিলে গাজা কোলা হাতে ওসামা কাশু

ওসামা কাশুর এই যাত্রার শুরুটা অবশ্য ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডেই শুরু হয়েছিল। ২০০১ সালে কাশু ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটি মুভমেন্ট (আইএমএস) প্রতিষ্ঠা করেন, যারা  অহিংস প্রতিরোধের মাধ্যমে  ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ইজরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্বকে চ্যালেঞ্জ করে।

এই সংগঠনটিই পরে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কট, নিষেধাজ্ঞা এবং বিনিয়োগ প্রত্যাহারের (বিডিএস) আন্দোলনে পথ দেখায়। বিডিএস আন্দোলন এমন কোম্পানি এবং পণ্যগুলোর বয়কট করে যা ইজরায়েলের ফিলিস্তিনি জনগণের উপর দমনমূলক কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহণ করছে।

২০০৩ সালে পশ্চিম তীরের ‘জাতিবিদ্বেষি প্রাচীর’ বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আয়োজন করার কারণে প্যালেস্টাইন ছাড়তে বাধ্য হন কাশু। পরে তিনি যুক্তরাজ্যে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন এবং চলচ্চিত্রের ছাত্র হিসেবে প্যালেস্টাইনি গল্পগুলো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রচার করার সংকল্প নেন। তার ‘এ প্যালেস্টাইনি জার্নি’ সিরিজটি ২০০৬ সালে আল-জাজিরা নিউ হরাইজন অ্যাওয়ার্ড পায়।

কাশু এখন গাজা কোলার পরবর্তী সংস্করণ তৈরি করছেন। তার আশা গাজা কোলার প্রতিটি চুমুক ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-দুর্দশা স্মরণ করিয়ে দেবে।  

তিনি বলেন, আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে এই ভয়ানক হলোকস্টের কথা স্মরণ করাতে হবে। এটা ঘটছে এবং এটি ৭৫ বছর ধরে ঘটছে। এই কোলাটির উদ্দেশ্য হলো সবাইকে সবিনয়ে মনে করিয়ে দেওয়া; হয়ত এইভাবে: 

‘ফিলিস্তিনিদের শুভেচ্ছা নেবেন, আপনার পানীয় উপভোগ করুন’

আল জাজিরায় প্রকাশিত অ্যামি ফ্যালানের কলামের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ

বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
এমএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।