ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৪
হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ইসরায়েল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল।  

দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, তাদের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে।

এর আগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, তিনি লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।  

নেতানিয়াহুর দপ্তর বলছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি মন্ত্রিসভায় ১০-১ ভোটে পাস হয়। মঙ্গলবার রাতে এ সংক্রান্ত ভোট হয়।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি নিয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল হিজবুল্লাহর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে এবং এখন গাজায় হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এবং তার শীর্ষ নিরাপত্তা উদ্বেগ ইরানের বিরুদ্ধে মনোনিবেশ করতে পারবে।

নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দেন, সম্ভাব্য চুক্তি লঙ্ঘন করলে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে কঠোর আঘাত হানা হবে।

যুদ্ধবিরতিকে ‘সুখবর’ বলছেন জো বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার এ যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনাকে ‘সুখবর’ হিসেবে দেখছেন।

ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর তিনি এমনটি বলেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল বুধবার ভোর ৪টা থেকে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে যাবে।

বাইডেন আরও বলেন, ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি যোগ করেন, চুক্তিটি ‘স্থিতিশীল সংঘাতবিরতি’ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন সেনাবাহিনী ‘নিজেদের ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেবে। ’

 বাইডেন আরও যোগ করেন, চুক্তি ভঙ্গ হলে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ বজায় থাকবে।

খুশি নন ইসরায়েলের নিরাপত্তামন্ত্রী

ইসরায়েলে সবাই যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করছেন না। এর মধ্যে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির। তিনি নেতানিয়াহুর সরকারের একজন ডানপন্থী সদস্য।

এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, চুক্তিটি ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে বাসিন্দাদের তাদের ঘরে ফিরিয়ে আনার নিশ্চয়তা দেয় না এবং লেবানন সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহকে পরাস্ত করার শক্তি রাখে না।

বেন-গভির বলেন, লেবানন ছেড়ে যেতে হলে, আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা বলয় থাকতে হবে।

এর আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, লেবাননের সঙ্গে চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে জাতিসংঘের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন, এবং যেকোনো লঙ্ঘনের প্রতি ইসরায়েল ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ প্রদর্শন করবে।  

কেমন হতে পারে যুদ্ধবিরতি

হিজবুল্লাহ-ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনেকটা দুর্বল এবং তা রক্ষা করা কঠিন হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  

ইসরায়েলের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং কনসাল জেনারেল অ্যালন পিঙ্কাস বলেছেন, নেতানিয়াহুর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা ‘খুবই ভঙ্গুর’ মনে হচ্ছে, কারণ এটি ‘দীর্ঘ সময় ধরে রক্ষা করা এবং বজায় রাখা খুবই কঠিন’ বলে মনে হচ্ছে।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, চুক্তিতে থাকা শর্তগুলো ‘অপ্রয়োগযোগ্য’।
 
ধারণা করা হচ্ছে, সেনাবাহিনী লেবাননে অস্ত্র উৎপাদন, বিক্রয় এবং স্থানান্তর পর্যবেক্ষণ করবে – এবং এটি একটি অসম্ভব বিষয়, বলেন পিঙ্কাস। তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি, লেবানন সেনাবাহিনী সবসময় হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাত এড়িয়ে চলেছে।

নিহত বেড়ে ৩ হাজার ৮২৩

গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। তখন থেকেই লেবাননের সঙ্গে সংঘাত শুরু হতে থাকে ইসরায়েলের। গত কয়েক মাসে সেই সংঘাত চরমে ওঠে।

ইসরায়েল লেবাননে নজিরবিহীন হামলা চালাতে শুরু করে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৮২৩ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ হাজার ৮৫৯ জন।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন তথ্য জানিয়েছে। হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিতের মধ্যেও ইসরায়েলের হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় লেবাননে ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৬০ জন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৩১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৪
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।