২৬ বছর বয়সী চিউগো আকুজুবি। এই বছরের শুরুতে হিউস্টনে ব্যক্তিগত কারণে বাড়ি ছাড়ার পর থেকে ফ্রি-ফুড বা খাবার সহায়তা এবং বন্ধুদের আর্থিক সাহায্যের ওপর বেঁচে আছেন।
আকুজুবি ২০২১ সালে স্নাতক শেষ করেছেন। তবে এর পর থেকে একটি পূর্ণকালীন চাকরি খুঁজে পেতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি গ্রাফিক ডিজাইন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এবং কপিরাইটিং ইত্যাদি কিছু কাজ করছেন।
আকুজুবি আজকের আমেরিকার লাখ লাখ মানুষের মধ্যে একজন, যারা বর্তমান অর্থনীতিতে সংগ্রাম করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালে একক ব্যক্তির জন্য দারিদ্র্যসীমা ছিল ১৫ হাজার ৪৮০ ডলার। অনুমান করা হচ্ছে এই বছর তাদের আয় ১০ হাজার ডলারেরও কম হয়েছে।
গত কয়েক বছরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার খরচ কিছুটা কমেছে, তবে নিম্ন আয়ের আমেরিকানরা এখনও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং বাড়তি সুদের হার-পরবর্তী এই সময়টাতে সংগ্রামের মধ্যেই আছেন। যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং চীনের পণ্যের উপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
আকুজুবি বলেন, আমি জানি না আমি এতদিন কীভাবে বেঁচে আছি। যদি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, আমি জানি দরিদ্র মানুষদের টিকে থাকার নতুন উপায় খুঁজতে হবে। আমরা যা আছে তা নিয়ে চলতে শিখেছি।
মুদ্রাস্ফীতি ২০২২ সালে যেভাবে ৪০ বছরে সর্বোচ্চে পৌঁছে গিয়েছিল সেখান থেকে বর্তমানে অনেক কমে এসেছে। তবে গত নভেম্বরে মূল্যসূচক অনুযায়ী, জিনিসপত্রের দাম ২০২০ জানুয়ারি তুলনায় ২২.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ২৩ বছরর মধ্যে সুদের হার সর্বোচ্চে নিয়ে যাওয়ার পর গত সেপ্টেম্বরে থেকে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাতে শুরু করেছে, তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, ঋণের খরচ এখনও অর্থনীতির কিছু অংশে চাপ সৃষ্টি করছে।
ব্যাংক অফ আমেরিকার একটি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ৩০ শতাংশ আমেরিকান পরিবার বলছে, এই বছর তাদের আয়ের ৯৫ শতাংশের বেশি বাসাভাড়া, বাজার খরচ এবং গ্যাস-পানির বিলের মত প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় হয়ে গেছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় বেশি। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
যদি ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং চীনের পণ্যের উপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, তবে আগামী বছর জিনিসপত্রের দাম আবারো বৃদ্ধি পেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এর ফলে ২০২৩ সালের ক্রয় ক্ষমতার তুলনায় প্রতি পরিবারের বার্ষিক ক্রয়ক্ষমতা প্রায় ১২শ ডলার কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, যদি আমেরিকানরা দেশীয়ভাবে উৎপাদিত বা কম শুল্কের পণ্য কিনে, সেক্ষেত্রে হিসাবে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছে, এবারের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতি ২০২১ সালের করোনা পরবর্তী সময়ের তুলনায় ভিন্ন হতে পারে। সে সময় মহামারীর প্রভাবে চাহিদা-সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। ওই সময়ে, আমেরিকানরা মহামারীর সময়কার সঞ্চয় এবং মহামারী-যুগের কিছু সুবিধা যেমন শিশু কর ক্রেডিটের সম্প্রসারণ এবং বিনামূল্যে স্কুল লাঞ্চ সুবিধা পেলেও এখন তা পাওয়া যাবে না।
ওয়েলস ফার্গোর অর্থনীতিবিদ শ্যানন গ্রেইন বলছেন, পরিবারগুলো এখন মহামারীর পরের সময়ের মত ভালো অবস্থায় নেই, তবে আমরা একটি ভিন্ন মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতির কথা বলছি। যেখানে শুল্ক আরোপের ফলে এককালীন মূল্য সমন্বয় হবে, কোম্পানিগুলো প্রতি মাসে তাদের দাম বাড়াবে না। তবে এই পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গ্রেইন বলেন, আগামী বছর আমাদের এমন একটি অর্থনৈতিক পরিবেশ থাকবে যেখানে ধীরগতিতে হলেও ব্যয় বাড়বে। যা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অনেক বেশি অনিশ্চয়তা নিয়ে আসবে; যারা ইতোমধ্যেই মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার মোকাবিলায় অনেক বেশি চাপে আছে।
সূত্র: সিএনএন
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
এমএম