ঢাকা, রবিবার, ১২ মাঘ ১৪৩১, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘বাড়ি ফেরার’ বাড়ি নেই মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের  

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
‘বাড়ি ফেরার’ বাড়ি নেই মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের  

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় আরও চারজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে যাচ্ছে  হামাস। বিপরীতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মেনে ইসরায়েলে কারাগারে আটক থাকা ১৮০ জন ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পাবেন।

এর আগে প্রথম দফায় ৯০ কারাবন্দী ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছিল ইসরায়েল।

প্রথম ধাপের ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতিতে মোট ৩৩ ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে। বিনিময়ে ১ হাজার ৮০০ জনের মতো ফিলিস্তিনি মুক্তি পেতে পারেন। মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলিরা সবাই বাড়ি ফিরতে পারলেও ফিলিস্তিনিদের গল্পটা ভিন্ন।    

গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অবরুদ্ধ উপত্যকাটি দৃশ্যত বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার উত্তরাংশ। গাজায় জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।

প্যালেস্টাইনিদের জন্য যুদ্ধবিরতির আনন্দের মুহূর্তগুলো দ্রুত ম্লান হয়ে যাচ্ছে। গাজার জাবালিয়া শহরে, যেখানে সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির অবস্থিত, বাসিন্দাদের শেয়ার করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

শনিবার হাজারো ফিলিস্তিনি উত্তর গাজায় ফিরবেন। তাঁদের জন্য সেখানকার বিধ্বস্ত ভবনের পাশের খোলা জায়গায় তাঁবুর আশ্রয়শিবির তৈরির কাজ চলছে।

গাজা যুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় মাওয়াসি এলাকায় সন্তানদের আশ্রয় নিয়েছিলেন ওয়ায়েল জুনদিয়া। সন্তানদের জন্য তাঁবু প্রস্তুত করতে করতে জুনদিয়া বলেন, দক্ষিণ থেকে আসা আমার ছেলেদের জন্য এই তাঁবু। আমরা কি এই তাঁবুর স্বপ্ন দেখেছিলাম? এই এক তাঁবুতে ১০ জনকে থাকতে হবে। এই জায়গা কি সত্যিই পর্যাপ্ত?

তিনি বলেন, শনিবার দক্ষিণাঞ্চল থেকে গাজা নগরীতে বানের পানির মতো মানুষ ঢুকবেন। এই তাঁবুতে গুলোতে ১০০-২০০ জনের জায়গা হয়ত হবে। অথচ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফিরবেন ১৫ লাখ মানুষ। তাঁরা কোথায় যাবেন? 

আল-ফালুজা এলাকার দুয়া আল-খালিদি এক জন মা বলেন, আমি আমার দুই কন্যার সঙ্গে বেঁচে আছি, আমরা আমাদের বাড়ির ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে বেরিয়ে এসেছি। ধ্বংসাবশেষের নিচে, আমার স্বামী, শাশুড়ি এবং ননদির মৃতদেহ ৯ অক্টোবর থেকে চাপা পড়ে আছে।

তিনি বলেন, আমি কিছু চাই না, শুধু তাদের মৃতদেহ চাই যাতে আমি তাদের মর্যাদার সঙ্গে দাফন করতে পারি।

গাজার ক্রীড়াবিদ হুসেইন আওদা জানান, যুদ্ধের শুরুতে তিনি তার পরিবারের ১০ সদস্যকে হারিয়েছেন। তিনি একটি ভিডিও পোস্ট করেন যা তার তিনতলা বাড়ি এবং ক্রীড়া ক্লাবের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।  

তিনি বলেন, এখানে আমি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষগুলো হারিয়েছি- আমার ভাই, আমার ছেলে, আমার জীবিকার উৎস। যুদ্ধবিরতির পর গাজার বাসিন্দাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তির ছোঁয়া এসেছে, কিন্তু বাস্তবতা তাদের জন্য কঠিন। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই তাদের হারানো প্রিয়জনদের খুঁজছেন।

এদিকে গাজার জরুরি পরিষেবা বিভাগ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর ট্যাংকের গোলায় দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাই এই যুদ্ধবিরতি কত দিন টিকবে তা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।  

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫
এমএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।