ঢাকা, বুধবার, ১১ চৈত্র ১৪৩১, ২৬ মার্চ ২০২৫, ২৫ রমজান ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

উত্তাল তুরস্কে পাঁচ দিনে ১১৩৩ মানুষ আটক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৫
উত্তাল তুরস্কে পাঁচ দিনে ১১৩৩ মানুষ আটক

তুরস্কে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে পাঁচ দিন ধরে চলা বিক্ষোভে এক হাজার ১০০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও কড়া সমালোচক।

 

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়া জানান, গত সপ্তাহে দেশজুড়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভ থেকে এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ১৩৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি বলেন, আমাদের রাস্তাগুলোকে আতঙ্কের পরিবেশে পরিণত করা এবং আমাদের জাতির শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করার কোনো প্রচেষ্টাই বরদাশত করা হবে না।  

দুর্নীতির অভিযোগে গত মঙ্গলবার ইমামোগলু গ্রেপ্তার হন। তবে তিনি দুর্নীতির এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তাকে মেয়রের পদ থেকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার হলেও তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য একরেম ইমামোগলুকে তাদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করেছে।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি তার প্রার্থিতায় বাধা সৃষ্টি করছে না, এমনকি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিতও হতে পারেন। তবে যদি তার বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

২০১৩ সালের গেজি আন্দোলনের পর চলমান বিক্ষোভকে সবচেয়ে বড় গণআন্দোলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইস্তানবুলের একটি পার্ক ভাঙার বিরুদ্ধে গেজি আন্দোলন শুরু হয়েছিল।

এএফপির হিসাব অনুযায়ী, তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের মধ্যে অন্তত ৫৫টি প্রদেশে—অর্থাৎ দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায়— এবারের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

যদিও তুরস্কজুড়ে চলমান বিক্ষোভের বেশিরভাগই শান্তিপূর্ণ ছিল, তবে সোমবার রাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ইস্তানবুলে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।  

বিক্ষোভকারীদের তুরস্কের পতাকা হাতে স্লোগান দিতে দেখা যায়, বিপরীতে দাঙ্গা পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান, টিয়ার গ্যাস ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে।

বিবিসি গতকাল ইস্তানবুলের সড়কে দুই তরুণ বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথা বলেছে। তারা একপ্রকার ক্ষোভ ও আবেগ নিয়ে ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে কথা বলেন।

এক তরুণী বলেন, আমাদের ভোটের অধিকার আছে, আমাদের অধিকার আছে আমাদের নেতা নির্বাচনের। কিন্তু তিনি (প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান) আমাদের সেই অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন।

আরেক তরুণ বলেন, আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা চাই জনগণই তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করুক। আর আমরা চাই স্বাধীনভাবে আমাদের নেতা নির্বাচনের অধিকার, যেখানে কাউকে অন্যায়ভাবে কারাবন্দি হতে হবে না।  

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান অবশ্য বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়ে জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করার অভিযোগ তুলেছেন সিএইচপির বিরুদ্ধে।  

ইউরোপীয় কমিশন তুরস্ককে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে, কারণ দেশটি ইউরোপীয় পরিষদের সদস্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগদানের প্রার্থী।

কমিশনের মুখপাত্র গিয়োম মের্সিয়ে সাংবাদিকদের জানান, আমরা চাই তুরস্ক ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত থাকুক, তবে এর জন্য গণতান্ত্রিক আদর্শ ও চর্চার প্রতি স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।

গ্রিস সরকারও প্রতিবেশী তুরস্কের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, আইনের শাসন ও নাগরিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করা কোনোভাবেই সহ্য করা যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৫
আরএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।