মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের দিনও গাজায় নির্বিাচরে বোমা বর্ষণ করেছে দখলদার ইসরায়েল। ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন যখন ১১টি মুসলিম দেশ দিনটি আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করছে, তখন গাজাবাসীর ঘুম ভেঙেছে বোমার শব্দে।
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক হামলায় রোববার (৩০ মার্চ) ঈদুল ফিতরের সকাল থেকে ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
সেখানকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রোববার (৩০ মার্চ) এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যমটির সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচজন শিশু। আল-মাওয়াসিতে বিমান হামলায় তিনজন তরুণী নিহত হয়েছেন। আল জাজিরার যাচাইকৃত ভিডিও ফুটেজ দেখে বোঝা গেছে, তারা ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নতুন পোশাক পরেছিল।
নতুন পোশাক পরা যে শিশুরা বেঁচে আছে, তারা ক্ষুধায় কাতর এবং মানসিকভাবে আহত। কারণ, ঈদ উৎসবে খাবার প্রস্তুত করার মতো কোনো খাদ্য উপকরণ গাজায় নেই। অঞ্চলটিতে খাদ্যসহ জরুরি সরবরাহ কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল আটকে রেখেছে।
গাজার ফিলিস্তিনিরা ঈদের দিন ভোরে তাদের প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত করেন। শনিবারের (৩০ মার্চ) ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের লাশ মর্গে রয়েছে। নিহতদের স্বজনরা সেখানেই জিয়ারত করতে যান।
গাজার মসজিদগুলোতেও ছিল শোকের ছায়া। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন ফিলিস্তিনিরা। নামাজের সময়ও শোনা গেছে ইসরায়েলি আগ্রাসনের আওয়াজ। এক ভিডিওতে দেখা যায়, নামাজ চলাকালে গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে এলাকা।
এভাবেই সবকিছু হারিয়ে গাজাবাসীদের ঈদ এবার দুঃখের। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অনেকে পরিবারের ২০ জন সদস্যকেও হারিয়েছেন। প্রিয়জনকে হারানোর তাজা কষ্ট বুকে নিয়েই রোববার ফিলিস্তিনিরা ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
ঈদুল ফিতরেও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গাজায় হত্যা, বাস্তুচ্যুতি, ক্ষুধা এবং অবরোধ চলছে। এসবের মধ্যেও ফিলিস্তিনিরা ঈদ পালন করছেন মূলত বাড়ির অবুঝ শিশুদের খুশি করার জন্য। কিন্তু ঈদের আনন্দের কথা বলতে গেলে, কোনো ঈদ নেই বলে তারা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
বেঁচে থাকাটাই এখন গাজাবাসীর ঈদ আনন্দ। ঈদের নামাজ আদায় করতে পারাটাই ঈদ বোনাস। ঈদের সকালে ফিলিস্তিনিদের বাড়িতে সুম্মাকিয়া রান্না হওয়ার রেয়াজ। ঝোল জাতীয় খাবারটি ভেড়ার মাংস বা গরুর মাংসের সঙ্গে ভাজা তিল, ছোলা, চার্ড শাক এবং সুমাক-পানি দিয়ে তৈরি করা হয়। ফিলিস্তিনি ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিত খাবারটি ঈদের সকালে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে খাওয়া হয়। কাছের মানুষ এবং প্রতিবেশী বাড়িতেও এ খাবার বিলানো হয়।
কিন্তু ইসরায়েলি বর্বর হামলার প্রেক্ষিতে এবার সেই আয়োজনের সুযোগই নেই। এসব উপকরণের রসদ নেই বাজারেও। সেখানে কোনো টাটকা খাবারই পাওয়া যাচ্ছে না। গাজার কৃষিব্যবস্থার ৬০ শতাংশ ইসরায়েলি বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
কোথাও কোথাও খাদ্য উপকরণ মিললেও সেগুলো রান্না করার সুযোগ নেই। গাজায় খাদ্য সংকটের পাশাপাশি জ্বালানি সংকটও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকাটাই প্রধান কাজ ফিলিস্তিনিদের।
এদিকে ইসরায়েলিরা গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে। ঈদের দিনেও গাজাবাসীর ঘর অন্ধকার।
গত ১৮ মার্চ ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েল টানা বিমান হামলা শুরু করে। তারপর থেকে ৯২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলিরা গাজায় কর্মরত প্যারামেডিকদেরকেও টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে। ফলে বোমাবর্ষণে আহত ফিলিস্তিনিদের উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৫
এসএএইচ