ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক হারে নতুন শুল্কারোপ একটি ‘নতুন বিশ্ব’ তৈরি করেছে, যা কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলায় নয় বরং ‘চুক্তি ও জোট’ শাসিত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন আমদানি শুল্ক ব্যবস্থার প্রভাবে বাজারের পতনের ফলে পৃথিবীজুড়ে দেশগুলো আরও পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা যে পৃথিবীকে চিনতাম তা নেই। পুরানো ধারণাগুলোকে আর স্বাভাবিকভাবে নেওয়া যাবে না।
শনিবার থেকে ট্রাম্পের বিশ্বব্যাপী পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ মৌলিক আমদানি শুল্ক কার্যকর হয়েছে। যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ শুল্ক নিয়ে তুলনামূলকভাবে সহজে পার হলেও অনেক দেশ আগামী দিনে আরও বেশি শুল্কের সম্মুখীন হবে।
‘এটি একটি অর্থনৈতিক বিপ্লব এবং আমরা জিতব,’ শনিবার ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন। ‘ধৈর্য ধরুন, এটা সহজ হবে না, কিন্তু এর শেষটা হবে ঐতিহাসিক। ’
স্টারমার দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধে কেউই জিততে পারে না। ’ ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের ‘গভীর’ অর্থনৈতিক পরিণতি বর্ণনা করে শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় তিনি ইঙ্গিত দেন, ‘সব বিকল্প ভেবে রাখা হয়েছে। ’
রোববার যুক্তরাজ্যের ট্রেজারির প্রধান সচিব ড্যারেন জোন্স বিবিসির ‘সানডে উইথ লরা কুয়েনসবার্গ’ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘গত কয়েক দশক ধরে আমরা যে বিশ্বায়নের কথা জানি,’ তার অবসান ঘটেছে।
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করতে আগ্রহী ছিলেন না। কারণ, কর্মকর্তারা গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিশ্চিত করার আশায় দেশটির সঙ্গে আলোচনা করছেন।
স্টারমার তার মতামত নিবন্ধে জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি কেবল সেই ক্ষেত্রেই করা হবে, ‘যদি এটি ব্রিটিশ ব্যবসা ও কর্মজীবীদের নিরাপত্তার জন্য সঠিক হয়। ’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি ‘স্বাধীন আর মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন’ চালিয়ে যাবেন।
চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ৩৪ শতাংশ শুল্ক আগামী সপ্তাহে কার্যকর হতে যাচ্ছে। উল্টো বেইজিং ৩৪ শতাংশ শুল্ক চালু করার ঘোষণা দিয়েছে, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানসহ প্রায় ৬০টি মার্কিন বাণিজ্য অংশীদার বুধবার থেকে উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হবে, যা বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষ অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।
বুধবার ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার ফলে এর প্রভাবে পড়া দেশগুলো প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গাগওয়া শনিবার ঘোষণা করেন, তিনি ১৮ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর সমস্ত শুল্ক স্থগিত করবেন।
রোববার ইন্দোনেশিয়ার প্রধান অর্থনৈতিকমন্ত্রী এয়ারলাঙ্গা হার্টার্তো এক বিবৃতিতে বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি তার ট্রাম্পের ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে না।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ বিবেচনা করে বিনিয়োগের পরিবেশ এবং জাতীয় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, জাকার্তা পোশাক ও জুতা শিল্পের মতো সম্ভাব্য প্রভাবিত খাতগুলোকে সমর্থন দেবে।
১৯৩০ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছিল স্মুট-হলি শুল্ক আইন। ওই আইন বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ ঘটিয়েছিল এবং মহামন্দাকে আরও গভীর করে তুলেছিল। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ বলছে, সেই আইনের পর এবারই শুল্ক সবচেয়ে বাড়ল।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২৫
এমএইচডি/আরএইচ