ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল স্থগিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৫
ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল স্থগিত

যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি এবং নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রায় ৭৯০ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল আটকে রেখেছে। নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

এই পদক্ষেপটি এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের হুমকির পর। ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ হলে ডাইভার্সিটি, ইকুইটি ও ইনক্লুশন কর্মসূচি এবং ট্রান্সজেন্ডার নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্কুলগুলোর ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে যেখানে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

মঙ্গলবার গভীর রাতে হোয়াইট হাউস এই তহবিল স্থগিতের কথা নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত কিছু জানায়নি— কোন কোন প্রকল্প বা গ্র্যান্ট এর আওতায় পড়েছে, তা স্পষ্ট নয়।

একজন কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, স্থগিত তহবিলের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের বিভিন্ন অনুদান ও চুক্তি।

এক বিবৃতিতে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ৭৫টিরও বেশি ‘স্টপ-ওয়ার্ক অর্ডার’ পেয়েছে, যেগুলোর আওতায় গবেষণা চলছিল যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় প্রতিরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ১ বিলিয়ন ডলারের অনুদান স্থগিতের বিষয়ে তারা এখনো কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্ট মাইকেল আই কটলিকফ ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এ বিষয়ে ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।

নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তারা গণমাধ্যমের কাছ থেকে তহবিল স্থগিতের খবর জানতে পেরেছে। তবে এখনো সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, তারা চলমান তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে।

একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি যে ফেডারেল তহবিল পায়, তার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জীবন রক্ষাকারী গবেষণা হয়— যেমন সম্প্রতি তৈরি করা বিশ্বের সবচেয়ে ছোট পেসমেকার এবং আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে গবেষণা। এসব গবেষণা এখন হুমকির মুখে।

গত মাসে ট্রাম্প প্রশাসন ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল— যার মধ্যে কর্নেল ও নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিও ছিল। চিঠিতে বলা হয়েছিল, যদি তদন্তে দেখা যায় যে, তারা কথিত ‘বিরোধী-সেমিটিজম’ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল গত মাসে বাতিল করা হয়েছিল। পরে নির্ধারিত কিছু বড় পরিবর্তন মেনে নেওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে আলোচনায় বসে সরকার। গবেষণা অব্যাহত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওই সিদ্ধান্ত অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বাক-স্বাধীনতা রক্ষাকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে সমালোচিত হয়। তারা এটিকে এক ধরনের একাডেমিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখেছেন।

গত সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান ও চুক্তির পর্যালোচনার ঘোষণা দেয় এবং এখন বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তহবিল পেতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ও জানিয়েছে, সরকারের সিদ্ধান্তে তাদের বেশ কিছু গবেষণা অনুদান স্থগিত করা হয়েছে।

এ ছাড়াও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে বিক্ষোভের দায়ে আটক করা হয়েছে এবং তাদের দেশ থেকে বহিষ্কারের প্রস্তুতি চলছে। অনেক বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসাও বাতিল করা হয়েছে।

অধিকারকর্মীরা এই পদক্ষেপগুলোকে ইসলামোফোবিয়া ও আরব-বিরোধী পক্ষপাতের উদ্বেগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলের হামলাকালীন সময়ে।

তবে ট্রাম্প প্রশাসন এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়নি।

সূত্র: আলজাজিরা

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২৫
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।