বাংলাদেশি পাসপোর্টে দীর্ঘদিন ধরে ‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশে বৈধ’ বাক্য সংযুক্ত ছিল। যার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশি নাগরিকদের ইসরায়েল ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা।
সেই সিদ্ধান্তের প্রায় চার বছর পর, বাংলাদেশ সরকার আবারও ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ বা ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ বাক্যটি পাসপোর্টে পুনঃস্থাপন করেছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে, যার মধ্যে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলও বার্তা সংস্থা এএফপি-র বরাত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ পুনরায় পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শব্দগুলো যুক্ত করেছে, যাতে নিশ্চিত করা যায় কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ইসরায়েলে প্রবেশ করতে না পারে। মুসলিম প্রধান দেশটি এখনো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং এ বিষয়ে দেশটির অবস্থান বরাবরই কঠোর।
সম্প্রতি ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ মানুষ ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভে অংশ নেয়। এই বিক্ষোভে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ছবি জুতাপেটা করার ঘটনাও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে, বিশেষত ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোয় ব্যাপকভাবে প্রচার পায়।
এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নীলিমা আফরোজ জানান, পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল বাদে’ শব্দগুলো পুনঃস্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার দিকেই ইঙ্গিত করে, যেখানে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি ও ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরোধিতা স্পষ্ট।
এ বিষয়গুলো উল্লেখ করার পাশাপাশি টাইমস অব ইসরায়েল পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার একটি সিদ্ধান্তের কথাও তুলে ধরে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশি পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সকল দেশে বৈধ’ বাক্যটি বাদ দেয়। তৎকালীন সরকার জানায়, এটি কোনো নীতিগত পরিবর্তন নয় বরং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পাসপোর্টের ভাষা সংশোধনের অংশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে জানায়, বাংলাদেশ ইসরায়েলকে কোনো স্বীকৃতি দেয়নি এবং তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কোনো পরিকল্পনাও নেই। এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র পাসপোর্টের ভাষাগত সমন্বয়, যাতে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) মান বজায় রাখা যায়।
তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, এটা কোনো নীতিগত পরিবর্তন নয়। বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান অপরিবর্তিত আছে। বাংলাদেশ এখনো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় না।
এতে বোঝা যায়, বাংলাদেশ জন্মের পর থেকেই ইসরায়েলের বিরোধীতা করে আসছিল। এবং এখনও সেটি বিদ্যমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৫
এমজে