বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগকারী ও বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে’র দীর্ঘদিনের প্রধান, ওয়ারেন বাফেট অবশেষে জানিয়ে দিলেন—তিনি চলতি বছরের শেষে সিইও পদ থেকে অবসর নেবেন।
শনিবার বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার সভায় এ ঘোষণা দেন ‘অরাকল অব ওমাহা’ খ্যাত ৯৩ বছর বয়সী এই ধনকুবের।
যদিও বহু বিনিয়োগকারী জানতেন এই ঘোষণা আসতে পারে, তবুও বিশ্বাস করছিলেন না—এত তাড়াতাড়ি সেটা বাস্তবে রূপ নেবে।
সিইও পদে বাফেটের স্থলাভিষিক্ত হবেন গ্রেগ অ্যাবেল, যিনি প্রতিষ্ঠানটির নন-ইনস্যুরেন্স কার্যক্রমের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২১ সালেই তাকে উত্তরসূরি হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এই পরিবর্তন কার্যকর হবে বোর্ড অনুমোদনের পর।
বাফেট জানিয়েছেন, তিনি একটিও বার্কশায়ার শেয়ার বিক্রি করবেন না এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে থেকে যাবেন। তারপর এই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে ছেলে হাওয়ার্ড বাফেটের হাতে।
‘উডস্টক ফর ক্যাপিটালিস্ট’ নামে খ্যাত বার্ষিক এই সভায় কেবল নেতৃত্ব বদলের ঘোষণা নয়, বিশ্বের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বাফেট। তার বক্তব্যে উঠে এসেছে গভীর দৃষ্টিভঙ্গি, অভিজ্ঞতা আর বাস্তববাদী বিশ্লেষণ।
সভায় বাণিজ্য ও বিশ্ব সম্পর্ক নিয়ে ওয়ারেন বাফেট বলেন, ব্যালান্সড ট্রেড (ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য) বিশ্বের জন্য ভালো। যত বেশি ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য হবে, ততই তা বিশ্বকে উপকার দেবে। বাণিজ্যকে যেন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার না করা হয়। ইতিহাস বলছে, বাণিজ্য কখনও কখনও যুদ্ধের রূপ নিতে পারে, যা সমাজে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। আমেরিকাতেও তার প্রভাব আমরা দেখছি। বিশ্ব যত সমৃদ্ধ হবে, আমরাও ততই উপকৃত হব। এটা কখনোই আমাদের ক্ষতির কারণ হবে না। বরং আমরা আরও নিরাপদ বোধ করব। যুক্তরাষ্ট্রে পুঁজিবাদ যেভাবে সফল হয়েছে, তা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমি বলতে কিছুটা লজ্জা বোধ করছি—অ্যাপলের সিইও টিম কুক বার্কশায়ারকে এত বেশি অর্থ এনে দিয়েছেন, যা আমি নিজেও পারিনি!
সরকারের মুদ্রানীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, অন্যের অর্থ দিয়ে বোকামি করা অনেক সহজ। সরকার প্রায়ই সেই ভুল করে। আমরা সেটা বেসরকারি খাতে দেখতে চাই না। যে মুদ্রার পতন হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি, তাতে বিনিয়োগ করার কথা আমরা চিন্তাও করি না।
বিশ্বের বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতি, মহামন্দা, পরমাণু সংকট নিয়ে বাফেট বলেন, আমরা এমন সমস্যার সমাধানে সময় ব্যয় করি না যেগুলো আদতেই সমাধানযোগ্য নয়। আমরা মহামন্দা, বিশ্বযুদ্ধ, পরমাণু বোমার আবিষ্কার— এসব কিছুর মধ্য দিয়ে গেছি। এসব সত্ত্বেও আমি হতাশ নই। সব সমস্যার সমাধান হয় না, তবুও আমরা এগিয়ে চলেছি। আমরা চাই একটি সমৃদ্ধ বিশ্ব। আজ যখন ৮টি দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে, এবং তার মধ্যে কিছু দেশের রাজনৈতিক অবস্থা অস্থিতিশীল—তখন একতরফাভাবে বিজয় ঘোষণা করা বোকামি।
সূত্র: এনডিটিভি, সিএনএন
এমএম