ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনের অস্ত্রে অশান্তির আগুন জ্বলবে ইউরোপজুড়ে

আন্তজার্তিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৩৭, মে ১৯, ২০২৫
ইউক্রেনের অস্ত্রে অশান্তির আগুন জ্বলবে ইউরোপজুড়ে ফাইল ছবি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইউক্রেন থেকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র ইউরোপের কালোবাজারে পৌঁছাবে। সংঘবদ্ধ অপরাধের ওপর সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইউরেশিয়া অবজারভেটরির একটি নতুন প্রতিবেদন থেকে এমনটি জানা গেছে।

পশ্চিমাদের সরবরাহ করা অস্ত্র এবং যুদ্ধ করে হাত পাকানো হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সৈনিক ইউরোপজুড়ে অপরাধ, অস্ত্র পাচার এবং অস্থিতিশীলতার ধাক্কা ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারী অস্ত্রসহ অস্ত্রের বিপুল মজুদ ইউক্রেনজুড়ে জমা হচ্ছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। যদি যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সম্ভবত ইউক্রেনে সামরিক আইন তুলে নেওয়া হবে। ফলে বেসামরিক জনগণকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য রাষ্ট্রের সম্পদ এবং ক্ষমতা কমে যাবে। এতে সংঘবদ্ধ অপরাধ করার জন্য আরও স্বেচ্ছাচারিতার ক্ষেত্র উন্মুক্ত হবে।

কিয়েল ইনস্টিটিউট বলছে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ন্যাটোর কাছ থেকে ইউক্রেন ৩৬৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা পায়। প্রতিবেদন অনুসারে, অরক্ষিত সীমান্ত আর দুর্বল পাহারার ফলে রাইফেল, গ্রেনেড এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মতো অস্ত্রের চোরাচালান ঠেকাতে দেশটি ব্যর্থ হতে পারে। এই বছরের শুরুতে, মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসন দাবি করেন, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী কালোবাজার এমনকি মাদক চক্রের কাছেও মার্কিন অস্ত্র বিক্রি করেছে।

পশ্চিমা মিডিয়া এবং কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, ইউক্রেনে পাঠানো অস্ত্র অপরাধীদের হাতে চলে গেছে। ইউরোপোল ২০২২ সালের এপ্রিলে রিপোর্ট করে, সংঘবদ্ধ অপরাধ গোষ্ঠীর জন্য ইউক্রেন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অস্ত্র পাচার করা হয়। সেই বছরের শেষের দিকে, ফিনল্যান্ড কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে, অস্ত্রগুলো স্থানীয় পর্যায়ে দেখা গেছে। সুইডেন, ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ডসেও একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে, স্প্যানিশ মিডিয়া রিপোর্ট করেছে, দক্ষিণ স্পেনের অপরাধ চক্রগুলো ইউক্রেন থেকে চোরাচালান করা আধুনিক অস্ত্র পেয়েছে।

নাশকতা, ড্রোন এবং সাইবার যুদ্ধে দক্ষ ইউক্রেনীয় সৈন্যদের জড়িয়ে পড়া নতুন হুমকি সৃষ্টি করছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, তারা ইউরোপের অপরাধী নেটওয়ার্কগুলোর জন্য ‘মূল্যবান’ হয়ে উঠতে পারে।

ইউক্রেনে দুর্নীতি একটি প্রধান উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক অনুমান অনুসারে, যুদ্ধের ক্ষতি মেরামত করতে দেশটির ৫২৪ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, অপরাধীরা অর্থ পাচার এবং প্রভাব অর্জনের জন্য প্রক্রিয়াটি কাজে লাগাতে পারে।

অস্ত্র পাচার এবং প্রতারণার বিষয়ে বাড়তে থাকা উদ্বেগের পরও, কিছু সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের যোগদানের জন্য চাপ দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকি ব্যবস্থা আরও দুর্বল হতে পারে। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, একটি সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ছাড়া, পশ্চিমা দেশগুলো এমন এক সংঘাতের ঝুঁকিতে রয়েছে। রাশিয়ার দাবি, ইউরোপই ওই সংঘাতের ইন্ধন জুগিয়েছে এবং এখন তা নিয়ন্ত্রণ করতে লড়াই করছে।

ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে সতর্ক করে রাশিয়া বলেছে, এটি কেবল সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করার এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিরুদ্ধে হুমকিকে বাড়িয়ে তোলে। রাশিয়া আরও বলে, অস্ত্রের অনিয়ন্ত্রিত সরবরাহের ফলে বিশ্বব্যাপী সংঘবদ্ধ অপরাধী গোষ্ঠী এবং চরমপন্থীদের হাতে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র গেছে।

এমএইচডি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।