পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহে স্থানীয় এক ইউটিউবার, একজন ব্যবসায়ী ও এক শিক্ষার্থীসহ ১০ জনেরও বেশি নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের পুলিশ।
বিবিসি জানিয়েছে, গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশসহ একাধিক রাজ্যে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হরিয়ানা পুলিশ জানিয়েছে, ট্র্যাভেল ভ্লগ বানাতে বেশ কয়েকবার পাকিস্তানে গেছেন জ্যোতি মালহোত্রা। চলতি বছরের মার্চ মাসেও পাকিস্তানে গিয়েছেন তিনি। অভিযোগ, দিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল জ্যোতির। ওই কর্মকর্তাকে ভারত থেকে কিছুদিন আগে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জ্যোতি বেশ কয়েকবার পাকিস্তানে গেছেন স্বীকার করেন তার বাবা বলেছেন, অনুমতি নিয়েই পাকিস্তানে গিয়েছিল আমার মেয়ে। আর সে কোনো গুপ্তচর নয়, ভ্লগার মাত্র।
জ্যোতি মালহোত্রার ব্যাপারে যা জানা যাচ্ছে
ইউটিউবে জ্যোতি মালহোত্রার সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা তিন লাখ ৭৭ হাজার আর ইনস্টাগ্রামে এক লাখ ৩৩ হাজার মানুষ তাকে ফলো করেন।
তার ভ্লগ থেকে জানা যাচ্ছে, চীন, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের নানা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন জ্যোতি। আর ভারতেরও বেশ কয়েকটি ধর্মীয় ও পর্যটন কেন্দ্রেও ঘুরেছেন তিনি।
পুলিশ বলছে, এতো রাষ্ট্র আর বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘোরাঘুরির জন্য অর্থ কোথায় পেলেন জ্যোতি মালহোত্রা। তার আয়ের উৎসের সঙ্গে এই ব্যয় মিলছে না। পুলিশের দাবি, জ্যোতি পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং একজন পাকিস্তানি নাগরিকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।
হরিয়ানার হিসার জেলার পুলিশ সুপার শশাঙ্ক কুমার সাওয়ান সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে জ্যোতি মালহোত্রার কোনো যোগাযোগ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার পাকিস্তান সফরগুলোর খরচ অন্য কেউ বহন করেছিল। এই ট্রাভেল ভ্লগারকে বিভিন্ন সময়ে কারা সহযোগিতা করেছেন, এমন কয়েকজনের ব্যাপারে সূত্র পাওয়া গেছে। তবে ওইসব ব্যক্তিদের পক্ষে সরাসরি সামরিক বাহিনী সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব ছিল না।
পাকিস্তানি দূতাবাসে যোগাযোগ ছিল জ্যোতির, দাবি পুলিশের
বিবিসি নিউজের সংবাদদাতা নিয়াজ ফারুকি জানিয়েছেন, দিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তা আহসান-উর-রহিমের সঙ্গে জ্যোতি মালহোত্রার যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
আহসান-উর-রহিমকে গত ১৩ মে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয় ভারতের সরকার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার সরকারি পদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কাজে জড়িত ছিলেন। ওই নির্দেশের পরেই জ্যোতি মালহোত্রাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জ্যোতি মালহোত্রার বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে পাকিস্তান সফরের ভিসা চেয়ে দিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসে আবেদন করার সময়েই প্রথমবারের মতো আহসান-উর-রহিমের সঙ্গে পরিচয় হয় মিজ. মালহোত্রার।
পাকিস্তান নিয়ে তার সাম্প্রতিক ভিডিওটি মার্চ মাসে আপলোড করা, যেখানে তাকে দিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসে এক রমজানের নৈশভোজে অংশ নিতে দেখা যায়। পাকিস্তানের অন্যান্য ভিডিওতে তাকে হিন্দু ও শিখ মন্দির, বিখ্যাত স্থানীয় বাজারগুলিতে ঘুরতে দেখা গেছে এবং স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে তাকে কথা বলতেও দেখা যায়।
পাঞ্জাব থেকে গ্রেপ্তার আরেক নারী
বিবিসির সংবাদদাতা চরণজীব কৌশল জানিয়েছেন, পাকিস্তান দূতাবাসের এক কর্মকর্তার কাছে তথ্য পাচার করার অভিযোগে পাঞ্জাবের মলেরকোটলা থেকে এক নারীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পাঞ্জাব পুলিশের মহানির্দেশক গৌরব যাদব এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন, গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার দুজনের নাম গাজালা এবং ইয়ামিন মুহাম্মদ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, পাকিস্তানে গোপন তথ্য সরবরাহ করে তারা অনলাইনে অর্থ পেতেন।
সোমবার এক্স হ্যান্ডেলে গৌরব যাদব লেখেন, সুখপ্রীত ও করণবীর সিং নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন তারা সেনাবাহিনীর চলাচলের খবর এবং পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ ও ভারতশাসিত কাশ্মীরের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর ব্যাপারে আইএসআইয়ের কাছে খবর পাঠাচ্ছিলেন।
আরও গ্রেপ্তার যারা
জ্যোতি মালহোত্রা ছাড়াও উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে শাহজাদ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা এএনআই। শাহজাদ রামপুরের বাসিন্দা এবং গত কয়েক বছর ধরে মাঝেমধ্যেই পাকিস্তানে যেতেন তিনি।
পুলিশের অভিযোগ, প্রসাধনী সামগ্রী, পোশাক, মশলা ইত্যাদি সীমান্ত দিয়ে পাচারের পাশাপাশি পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হয়ে কাজ করতেন শাহজাদ।
ওদিকে হরিয়ানা পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা শাখা কৈথল থেকে ২৫ বছর বয়সী দেবেন্দ্র সিং ধীলোঁ নামে এক ছাত্রকেও আইএসআইয়ের হয়ে কাজ করার জন্য গ্রেপ্তার করেছে।
ডেপুটি পুলিশ সুপার বীরভান সিং বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন ভারতীয় সেনাবাহিনী সর্ম্পকে গোপন তথ্য যোগান দিতেন দেবেন্দ্র সিং। পাকিস্তানে শিখ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান কার্তারপুর সাহিবেও গিয়েছিলেন দেবেন্দ্র। সেই সময় আইএসআইয়ের সংস্পর্শে আসেন তিনি। ভারতে ফিরে আসার পর থেকে তিনি সামরিক বাহিনী সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানে পাঠাতে শুরু করেন।
বীরভান সিং দাবি করেন, পাটিয়ালায় পড়াশোনা করার ফাঁকেই দেবেন্দ্র সিং মোবাইল ফোনে সেখানকার সেনা ক্যান্টনমেন্টের ছবি তুলেছিলেন আর সেগুলো আইএসআইকে পাঠিয়েছিলেন।
এরা ছাড়াও পাঞ্জাব আর হরিয়ানা থেকে আরও তিনজন করে ব্যক্তিকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
এসএএইচ