ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৩ জুন ২০২৫, ১৬ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘প্লেন ভেঙে পড়তে দেখে আমার ছেলে দোতলা থেকে ঝাঁপ দেয়’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:২০, জুন ১২, ২০২৫
‘প্লেন ভেঙে পড়তে দেখে আমার ছেলে দোতলা থেকে ঝাঁপ দেয়’ প্লেন দুর্ঘটনায় ছেলের বেঁচে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করছেন রামিলা

ভারতের আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেওয়ার পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই প্লেনটি আছড়ে পড়ে লোকালয়ে। ২৩০ যাত্রী ও ১২ জন ক্রুসহ প্লেনটি ভেঙে পরে মেঘানি নগর এলাকায় একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর।

দুর্ঘটনার সময় ওই হোস্টেলের দোতলার একটি কক্ষে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষার্থী। বিপদ আঁচ করতে পেরে তিনি দোতলা থেকে লাফ দেন। এতে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।  

আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে ওই শিক্ষার্থীর মা রামিলা বলেন, ‘প্লেন ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমার ছেলে দোতলা থেকে ঝাঁপ দেয়। এতে তার চোট লেগেছে, তবে এখন তার অবস্থা স্থিতিশীল। ’

স্থানীয় প্রশাসন সূত্র বলছে, আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা থাকতেন ওই হোস্টেলে। প্রায় ৫০ জন ইন্টার্ন থাকতেন সেখানে। ওই ভবনের পাশের একটি বিল্ডিংয়ে থাকেন রেসিডেন্ট চিকিৎসকেরা। তারা সকলেই অহমদাবাদের সিভিল হাসপাতালে কর্মরত।

আহমেদাবাদের একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছেন, এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী প্লেনটি চিকিৎসকদের একটি হোস্টেলের ওপর বিধ্বস্ত হয়েছে। পুলিশ, দমকল কর্মী এবং অন্যান্য সংস্থার কর্মীরা অল্পক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান। উদ্ধার তৎপরতা চলমান রয়েছে।

এ দুর্ঘটনায় অনেক তরুণের প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক কর্মকর্তা। নিহতরা ওই হোস্টেলের শিক্ষার্থী কি না তা স্পষ্ট করেননি তিনি। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আহমেদাবাদের ইতিহাসে এটি অন্যতম একটি কালো দিন। আমরা এত তরুণের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি। ’

এদিকে বিমান দুর্ঘটনার পর পর আহমেদাবাদের স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে বহু মানুষ ভিড় করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বিধ্বস্ত হওয়া প্লেনের যাত্রীদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন। এদেরই মধ্যে একজনের নাম পুনম প্যাটেল।

তিনি জানিয়েছেন, তার ননদ (স্বামীর বোন) ওই প্লেনের যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি হাসপাতালে হাজির হয়েছেন। এখন ননদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।

ফ্লাইট রাডারের তথ্য বলছে, বিধ্বস্ত এয়ার ইন্ডিয়ার প্লেনটি স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টায় মাটিতে অবস্থান করছিল এবং ওড়ার জন্য যাত্রা শুরু করে। দুপুর ১টা ৩৪ মিনিটে প্লেনটি রানওয়েতে গতি বাড়ায়। এর ৪ মিনিট পর দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে আকাশে ডানা মেলে। ৬২৫ ফুট উচ্চতায় উড়েই সিগন্যাল হারিয়ে ফেলে। এ সময় বিপদসংকেত পাঠান পাইলট।

আহমেদাবাদ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বা এটিসি জানিয়েছে, প্লেনটি আহমেদাবাদ থেকে স্থানীয় সময় একটা ৩৯ মিনিটে আকাশে ওড়ে। প্লেনের পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল  বিপদ বার্তা দিয়েছিলেন, কিন্তু তারপরে এটিসির ডাকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এরপরই প্লেনটি বিমানবন্দর থেকে অদূরে মেঘানি নগরে ওই হোস্টেলের ওপর ভেঙে পড়ে। দূর থেকে আগুন এবং কালো ধোঁয়া দেখা যায়। ভেঙে পরার পর বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। কী কারণে প্লেনটি ওড়ার কিছু সময় পরই আছড়ে পড়ে বিধ্বস্ত হলো, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ডিজিসিএ) জানিয়েছে, প্লেনটিতে মোট ২৪২ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৩২ জন যাত্রী এবং ১০ জন ক্রু সদস্য।  

সরকারি সূত্র বলছে, দুর্ঘটনাকবলিত প্লেনটি বোয়িং সংস্থার বি-৭৮৭ ড্রিমলাইনার ছিল। ১৬৯ জন ভারতীয় নাগরিক, ৫৩ জন ব্রিটিশ নাগরিক, একজন কানাডিয়ান নাগরিক এবং সাতজন পর্তুগিজ নাগরিক ছিলেন। বিমানের দুই পাইলটের নাম ক্যাপ্টেন সুমিত সবরওয়াল এবং ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দর।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা 

এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।