ঢাকা, শনিবার, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৪ জুন ২০২৫, ১৭ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে বেড়েছে তেলের দাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪:৩১, জুন ১৪, ২০২৫
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে বেড়েছে তেলের দাম

ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। তেল আবিব, তেহরানসহ অঞ্চলের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় তেল কোম্পানি, জাহাজ চলাচল সংস্থা ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে হরমুজ প্রণালীসহ গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে।

বাণিজ্যিক জাহাজ এখনও হরমুজ প্রণালী দিয়ে চলাচল করছে। তবে এখন খুব বেশি সতর্কতার সঙ্গে তাদের চলতে হচ্ছে। ইরান আগে পশ্চিমাদের চাপের জবাবে এই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিল। এসব বিষয় বিশ্ববাজারে এক ধরনের শঙ্কার জন্ম দিয়েছে, যার ফলে তেলের দাম বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ভাষণও পরিস্থিতি শান্ত করতে পারছে না। তিনি বলেন, যদি ইরান কোনো চুক্তিতে না আসে, তাহলে আরও বেশি মৃত্যু ও ধ্বংস হতে পারে।
 
শিপিং সংগঠন বিমকোর নিরাপত্তা প্রধান জ্যাকব লার্সেন রয়টার্সকে বলেন, যদি সবাই মনে করে যুক্তরাষ্ট্র হামলায় যুক্ত, তাহলে পরিস্থিতি আরো বেশি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠবে।

নিউ ইয়র্ক সময় বিকেল ৪টার দিকে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম গতকালের বাজার বন্ধের দামের চেয়ে ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।

 এক পর্যায়ে তেলের দাম ১৩ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়। এটি এখন পর্যন্ত এই বছরের জানুয়ারির পর থেকে সবচেয়ে বেশি দাম। সহজ কথায়, তেলের দাম হঠাৎ অনেক বেশি উঠেছিল।

আরব উপসাগর ও ওমান উপসাগরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ হল হরমুজ প্রণালী। বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল এই পথে যায়। যদি এই পথটি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তেলের দাম আরও বেশি বেড়ে যেতে পারে। এতে বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি বা দাম বৃদ্ধির চাপ বাড়বে।

এই দাম বেড়ে যাওয়ার খবর এসেছে এমন এক সময়ে, যখন সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (মৌলিক মূল্য সূচক) রিপোর্ট প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ছিল। ওই রিপোর্টে দেখা যায়, মাসে দাম মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছিল।  

আমেরিকায় সাম্প্রতিক সময়ে দাম প্রায় বাড়েইনি, পেট্রোলের দামও কমেছিল। এজন্য মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল। কিন্তু নতুন সংঘাতে এই স্বস্তি দ্রুত চলে যেতে পারে। অর্থাৎ দাম আবার বাড়তে পারে এবং মানুষকে কষ্ট করতে হতে পারে।

জেপি মরগ্যান চেজের বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি জ্বালানির দাম অনেক দিন ধরে বাড়তেই থাকে, তাহলে আমেরিকায় যেভাবে পণ্যের দাম কমছিল, সেটা আবার উল্টো দিকে যেতে পারে। অর্থাৎ, জিনিসপত্রের দাম আবার বাড়তে শুরু করতে পারে।

তারা আরও বলেন, ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য হলো জ্বালানির দাম কম রাখা— এটি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। তাই এমন কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা কম, যা তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ায়।

সংঘাতের খবর প্রকাশ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে বড় ধস নামে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১ দশমিক ১ শতাংশ, ডাও জোন্স ১ দশমিক৭ শতাংশ এবং নাসডাক ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমে গেছে।

আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক তৌফিক রহিম বলেন, আজকের বাজার দেখলে বোঝা যায়—এসঅ্যান্ডপি হোক বা বিটকয়েন—সবকিছুই মোটামুটি স্থিতিশীল বা কিছুটা নিচের দিকে। সবাই এখন অপেক্ষা করে দেখছে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়।  

তিনি বলেন, তেলের বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে, কারণ ইরান বৈশ্বিক তেল সরবরাহের বড় অংশীদার। এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ইরানের তেল অবকাঠামোয় বড় ধরনের হামলা করেনি। তবে যদি ভবিষ্যতে তেমন কিছু হয়, তাহলে এর প্রভাব হবে অনেক বেশি।  
 
যদি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ, যেমন হরমুজ প্রণালী সাময়িকভাবেই বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) জরুরি পরিস্থিতির জন্য তাদের সংরক্ষিত তেল ছাড়ার প্রস্তুতি রাখে। তবে এতে সংরক্ষণ শেষ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

আইইএর স্ট্র্যাটেজিক রিজার্ভে প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ব্যারেল তেল রয়েছে, যেখানে বিশ্ব দৈনিক প্রায় ১০০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ব্যবহার করে।  

ম্যাক্রোইকোনোমিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিসিএ রিসার্চের প্রধান ভূরাজনৈতিক কৌশলবিদ ম্যাট গার্টকেন আল জাজিরাকে বলেন, যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেটাই হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তেল সংকট।

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।