ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ জুলাই ২০২৫, ২৮ মহররম ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

অবৈধ অভিবাসীদের তৃতীয় দেশে রাখতে একমত ইইউ, কিন্তু কোথায় ?

সাগর আনোয়ার, জার্মানি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:১২, জুলাই ২৩, ২০২৫
অবৈধ অভিবাসীদের তৃতীয় দেশে রাখতে একমত ইইউ, কিন্তু কোথায় ?

অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো ও ইউরোপের বাইরের তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয়ের আবেদনকারীদের সাময়িকভাবে রাখার সিদ্ধান্ত ঐক্যমতে পৌঁছেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভূক্ত দেশেগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা। কিন্তু কোন দেশে অভিবাসীদের রাখা হবে সে ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি জোটটির নেতারা।

তবে সংকট মোকাবেলায় নতুন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জার্মানিসহ বেশিরভাগ দেশ সম্মতি দিয়েছে।

মঙ্গলবার ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন ইউরোপের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ইইউর পক্ষ থেকে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সদস্য দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা অভিবাসন সংকট মোকাবেলায় এক নতুন কৌশলের দিকে এগোচ্ছে। সেগুলো মধ্যে গূরুত্বপূর্ণ হলো তৃতীয় দেশে ‘ফেরত কেন্দ্র’  স্থাপন। এই কেন্দ্রগুলো ইউরোপের বাইরে হবে এবং সেখান থেকেই যাদের আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে বা হবে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হবে। জার্মানির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডব্রিন্ড কোপেনহেগেনের ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে জানান, ইতোমধ্যেই কিছু রাষ্ট্র এ বিষয়ে বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। জার্মানি এই উদ্যোগে অন্যদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

তৃতীয় দেশ কোনটি হবে?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডব্রিন্ড বলেন, ইইউ থেকে যাদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তাদেরকে ফেরত পাঠানোর কাজটি তৃতীয় দেশের ফেরত কেন্দ্র থেকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা সম্ভব। তবে এজন্য প্রয়োজন হবে আবেদন প্রত্যাখাত নাগরিকদের নিজ নিজ দেশগুলোকে চুক্তির মাধ্যমে সম্পৃক্ত করা, যাতে ঐসব দেশ নিজের প্রত্যাখ্যাত নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়।

তিনি বলেন, ইইউ ইতোমধ্যেই তিউনিসিয়া, মরক্কো ও মিশরের মতো উত্তর আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি করেছে। এর আওতায় এসব দেশ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌপথে যাত্রা রোধে সীমান্ত নজরদারি জোরদার করেছে এবং মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। বিনিময়ে তারা  ইইউর অর্থ সহায়তা পাচ্ছে।

তিনি বলেন, তবে ফেরত কেন্দ্র স্থাপন হবে আরেকটি  বড় ধাপ এবং এর জন্য প্রয়োজন হবে আরও নতুন অংশীদার। কিন্তু এই অংশীদার খুঁজে পাওয়া সহজ নয়।

প্রসঙ্গত- লিবিয়ার সঙ্গে অভিবাসন প্রত্যাশীদের ফেরত এবং আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন সংক্রান্ত আলোচনায় জন্য সম্প্রতি ইইউর একটি প্রতিনিধি দেশটিতে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রতিনিধি দলের সাথে এমন আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানায় লিবিয়া।

অভিবাসন কূটনীতিকে জোর ইইউ'র
ডেনমার্কের বৈঠকে ইইউ কমিশনার ম্যাগনাস ব্রুনার বলেন, তৃতীয় দেশ খোঁজা ও পাওয়া সহজ নয়, তবে এটি প্রয়োজনীয়। সত্যিকথা আমরা আমাদের প্রয়োজন মতো ভূগোল নির্বাচন করতে পারি না।  তিনি অভিবাসনকে কেবল মানবিক নয় বরং বাণিজ্য, উন্নয়ন ও অন্যান্য সহযোগিতামূলক আলোচনার সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন।

ইইউ কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইইউ সদস্য দেশগুলো যেন এমন দেশেও অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে পারে, যেখানে তাদের কোনো আত্মীয়স্বজন বা পূর্ব সম্পর্ক নেই। এর মাধ্যমে প্রত্যাখ্যাত শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো আরও সহজ হবে। কেননা, সবাই তাদের পরিবারের কাছে যেতে চায়।  

কঠোর অবস্থানে একমত কোপেনহেগেন বৈঠকে

কোপেনহেগেন বৈঠকে ইইউর অধিকাংশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর এই কঠোর নীতির পক্ষে মত দিয়েছেন। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডব্রিন্ড জানান, আফগানিস্তানে জার্মানির সাম্প্রতিক প্রত্যাবাসন কার্যক্রম অন্য দেশগুলোর মধ্যেও আগ্রহ তৈরি করেছে।

ডেনমার্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কারে ডিবভাদ বলেন, আমরা এখন দেখছি যে, অনেক দেশই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। জার্মানি তার প্রভাব এবং শক্তি এই অভিবাসন সমস্যা সমাধানের পেছনে নিয়োজিত করছে। আমরাও এতে যুক্ত হবো।

এদিকে কোপেনহেগেনের এই বৈঠক চলাকালেই জার্মানির লাইপজিগ থেকে একটি চার্টার্ড প্লেনে ইরাকে ৪৩ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।