ঢাকা, রবিবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৯১, শরণার্থীদের বহনকারী ট্রাকেও বোমা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:১৬, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৯১, শরণার্থীদের বহনকারী ট্রাকেও বোমা

শনিবার একদিনেই ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় ৯১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। নিহতদের মধ্যে এক খ্যাতনামা চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।

ইসরায়েলি বাহিনী অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে গাজার সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটি দখল করার চেষ্টা করছে এবং সেখানকার মানুষদের জোর করে দক্ষিণের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ঠেলে দিচ্ছে।

ইসরায়েলি বাহিনী আবাসিক বাড়ি, আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হওয়া স্কুল, বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবু এবং সামরিক নির্দেশে শহর ছাড়ার চেষ্টা করা লোকদের বহনকারী একটি ট্রাকেও বোমা বর্ষণ করেছে। এসব হামলায় অন্তত ৭৬ জন নিহত হন।

শনিবার ভোরে গাজা সিটির সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফার পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবু সালমিয়ার পারিবারিক বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন আবু সালমিয়ার ভাই, ভাবি ও তাদের সন্তানরা।

হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে কর্মরত আবু সালমিয়া বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, আমার ভাই ও তার স্ত্রীর মরদেহ দেখে আমি ভেঙে পড়েছি। নিজের প্রিয়জনকে হয় শহীদ হিসেবে, নয়তো আহত অবস্থায় গ্রহণ করতে হচ্ছে।

হামাস এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি চিকিৎসকদের ভয় দেখিয়ে শহর ছেড়ে যেতে বাধ্য করার জন্য একটি ‘রক্তাক্ত সন্ত্রাসী বার্তা’। তারা জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় ১,৭০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে হত্যা করেছে এবং ৪০০ জনকে বন্দি করেছে।

পালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা

আরেকটি হামলায় ইসরায়েলি বাহিনী একটি ট্রাকে থাকা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে আঘাত হানে। এতে অন্তত চারজন নিহত হন এবং রক্তাক্ত মরদেহ রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। এই হামলা শহরের নাসর এলাকায় ঘটে।

কেন্দ্রীয় গাজার আজ-জাওয়াইদা থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খোদারি জানিয়েছেন, নিহতরা ছিলেন হাজারো মানুষের মধ্যে, যারা নিরবচ্ছিন্ন বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ এবং কোয়াডকপ্টারের গুলির ভয়ে পালাচ্ছিলেন।

তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী বিস্ফোরকবাহী রোবটও ব্যবহার করছে, যা পুরো এলাকা ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং অশেষ ক্ষতি করছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবার বিস্ফোরণে মনে হয় যেন ভূমিকম্প হচ্ছে।

খোদারি আরও জানান, পরিস্থিতি এতই বিপজ্জনক যে উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসকরা আটকে পড়া বা আহতদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।

গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, আগস্টে শুরু হওয়া আক্রমণের পর থেকে গাজা সিটি থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পালাতে বাধ্য হয়েছে। আক্রমণের শুরুতে এ এলাকায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ ছিল।

ইসরায়েলি সেনারা গত দুই সপ্তাহে গাজা সিটিতে প্রায় ২০টি টাওয়ারবাড়ি ধ্বংস করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে যারা পালাতে পেরেছেন, তারা আশ্রয়ের জন্য ভয়াবহ সংকটে আছেন।

খোদারি এই দৃশ্যকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে উল্লেখ করে বলেন, আমরা দেখছি রাস্তাঘাটের পাশে তাঁবু গড়ে উঠেছে। মানুষ এমন জায়গায় তাঁবু ফেলছে যেখানে পানি, বিদ্যুৎ বা কোনো অবকাঠামো নেই। তাদের সামনে আর কোনো বিকল্পও নেই।

ইসরায়েলে প্রতিবাদ

চিকিৎসাসেবামূলক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) মিখাইল ফোতিয়াদিস জানিয়েছেন, দক্ষিণের আল-মাওয়াসিতে পরিস্থিতি ভয়াবহ, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী মানুষদের যেতে বলেছে।

তিনি বলেন, সবাই একটি তাঁবু খাটানোর জায়গা খুঁজছে, কিন্তু উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে না। অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। আমি সমুদ্রতীরে তাঁবু দেখেছি, যেখানে কেবল বালিই আছে। ফলে পানি পাওয়া খুব কঠিন। স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও কঠিন হয়ে পড়ছে, যা ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

হামাস দাবি করেছে, গাজায় অবশিষ্ট থাকা ৪৮ জন বন্দি গাজা সিটির বিভিন্ন পাড়ায় ছড়িয়ে আছে এবং চলমান আক্রমণ তাদের জীবন বিপন্ন করতে পারে।

শনিবার কাসাম ব্রিগেডস ইসরায়েলি বন্দিদের একটি যৌথ ছবি প্রকাশ করে এটিকে ‘বিদায়ী ছবি’ বলে আখ্যা দেয়।

এদিকে ইসরায়েলে হাজারো মানুষ তেল আবিবে সমবেত হয়ে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানায় এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হামাসের সঙ্গে চুক্তি করে অবশিষ্ট বন্দিদের মুক্ত করার আহ্বান জানায়।

তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও ইসরায়েলি সরকারকে চুক্তি করতে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানায়।

জর্ডানের আম্মান থেকে আল জাজিরার হামদা সালহুত জানিয়েছেন, এসব প্রতিবাদের প্রভাব সরকারের ওপর পড়ছে বলে মনে হচ্ছে না।

তিনি বলেন, বরং নেতানিয়াহুর ডানপন্থি জোটের সদস্যরা এসব বিক্ষোভের সমালোচনা করছে। তারা বলছে—এগুলো শুধু বিফল নয়, বরং ইসরায়েলের শত্রুদের সহায়তা করছে।

হামদা সালহুত আরও বলেন, গাজায় আটক বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ইসরায়েলের অব্যাহত সামরিক অভিযান এবং এর বিস্তার তাদের প্রিয়জনদের মৃত্যুদণ্ড ডেকে আনতে পারে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ আমরা এসব বিক্ষোভ দেখছি, যা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। এমনকি কিছু প্রতিবাদ নেতানিয়াহুর পশ্চিম জেরুজালেমের বাড়ির সামনেও পৌঁছেছে। বার্তা একটাই—যথেষ্ট হয়েছে!

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।