অর্থবছরের শেষ দিনেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক ব্যয় সংক্রান্ত বিল নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে সমঝোতা হয়নি। ফলে সিনেটে এ সংক্রান্ত বিলটি অনুমোদন পায়নি।
শেষ মুহূর্তে কোনো সমাধান না আসায় স্থানীয় সময় বুধবার (১ অক্টোবর) স্থানীয় সময় রাত ১২টার পর থেকেই সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় বরাদ্দ বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থাৎ মধ্যরাত পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই সরকারি অর্থায়ন বন্ধ হয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আংশিক শাটডাউনে প্রবেশ করেছে। এ কারণে জরুরি সেবা ছাড়া অন্য সব সরকারি কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।
১৯৮০ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এক ডজনেরও বেশি বার আংশিকভাবে বন্ধ হয়েছে। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এই তহবিল সংকটকে কাজে লাগিয়ে তিনি সরকারি খাতে বড় কাটছাঁট করতে পারেন। এতে আগের চেয়ে বেশি অচলাবস্থার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাইপার্টিজান পলিসি সেন্টারের হিসাবে, ১৯৮০ সালের পর এটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ১৫তম শাটডাউন। সবচেয়ে দীর্ঘ শাটডাউন হয়েছিল ২০১৮ সালের শেষ দিকে ও ২০১৯ সালের শুরুতে, যা ৩৪ দিন স্থায়ী ছিল। সেটিও ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, শাটডাউনের সময় আমরা এমন কিছু করতে পারি যা তাদের (ডেমোক্র্যাটদের) জন্য খারাপ হবে এবং তারা তা ফিরিয়ে আনতে পারবে না। যেমন, বিপুল সংখ্যক মানুষকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া, তাদের পছন্দের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া। সরকারের শাটডাউন থেকে অনেক ভালো কিছু আসতে পারে।
২০১৮ সালের পর প্রথম সরকার শাটডাউন বা অচলাবস্থার মুখে পড়েছে। ফলে অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত, তথা গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ অনুমোদনসহ কিছু সরকারি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সামাজিক নিরাপত্তা ও খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম চালু থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী ও আকাশপথ নিয়ন্ত্রণকর্মীরাও দায়িত্ব পালন করে যাবেন। কিন্তু যতদিন শাটডাউন চলবে তারা বেতন পাবেন না।
এর আগে যতবার শাটডাউন হয়েছে, ততবার সরকারি লাখো কর্মকর্তা-কর্মচারী সাময়িকভাবে ছুটিতে গেছেন। তারা তাদের বেতনও পেয়েছেন। কিন্তু এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ছুটিতে যাওয়াদের তিনি স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে পারেন। তিনি তীর্যক মন্তব্য করে বলেন, তারা ডেমোক্র্যাট; তারা ডেমোক্র্যাটই হবে। অর্থাৎ, যারা ছুটিতে গেছেন তারা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থক।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়কার হোয়াইট হাউসের প্রধান প্রধান নীতিশাস্ত্র আইনজীব রিচার্ড পেইন্টার এ বিষয়টিকে ট্রাম্পের ‘স্বৈরাচারী কৌশল’ বলে মন্তব্য করেছেন। কাতারের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট শাটডাউনের অজুহাতে ফেডারেল কর্মীদের বরখাস্তের হুমকি দিচ্ছেন। এর কিছু তিনি করতে পারবেন, কিন্তু বহু কিছুই কংগ্রেস অনুমোদন ছাড়া করা যাবে না, যার মধ্যে সিভিল সার্ভিসের চাকরির সুরক্ষাসহ ফেডারেল কর্মীদের চাকরিচ্যুত করাও অন্তর্ভুক্ত।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কংগ্রেসে বাজেট নিয়ে তীব্র দ্বন্দ্ব চলছিল। রিপাবলিকানদের খসড়া প্রস্তাব ডেমোক্র্যাটরা আগেই নাকচ করে দিয়েছিল। তারা দাবি করে, স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ, ওবামা কেয়ার ভর্তুকি নবায়ন এবং মেডিকেড কাটছাঁট রদ করা না হলে বিল পাস সম্ভব নয়। এর বিপক্ষে রিপাবলিকানদের যুক্তি, এসব ইস্যু আলাদা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে পরে সমাধান করা উচিত।
শাটডাউনের কয়েক ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার রাতে রিপাবলিকানদের আনা একটি বিল ৫৫–৪৫ ভোটে পাসে ব্যর্থ হয়। বিলটি নভেম্বরে পর্যন্ত অর্থায়নের সময়সীমা বাড়াতে চেয়েছিল, তবে পাসে ন্যূনতম ৬০ ভোট দরকার ছিল। ডেমোক্র্যাটদের আনা আরেকটি বিলও ৪৭–৫৩ ভোটে ব্যর্থ হয়। এতে স্বাস্থ্য খাতে এক ট্রিলিয়ন ডলার বাড়তি ব্যয় যোগ করা হয়েছিল। রিপাবলিকানদের কেউ সমর্থন দেননি। এ অবস্থায় একে অপরকে দোষারোপ শুরু করে দুই দল।
পরে হোয়াইট হাউস থেকে তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ডেমোক্র্যাট শাটডাউন’ লিখে পোস্ট করা হয়।
ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেন, স্বাস্থ্যসেবার সংকট সমাধান না করে রিপাবলিকানরা দেশকে শাটডাউনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। হাউস ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস অভিযোগ করেন, রিপাবলিকানরা এমন ভোট দিয়েছে, যা সাধারণ আমেরিকানদের ক্ষতি করবে।
এদিকে, রিপাবলিকান সিনেট নেতা জন থুন আশা করেন, আজ অনুষ্ঠিতব্য ফলো-আপ ভোটে ডেমোক্র্যাটদের উল্লেখযোগ্য সদস্য তাদের দলের ‘ক্লিন বিল’ সমর্থন করবেন। জন বলেন, সবকিছুই অপ্রয়োজনীয় ছিল। শুধুমাত্র তাদের বামপন্থী রাজনৈতিক ঘাঁটি খুশি করার জন্যই এটি করা হয়েছে।
এমজে