ঢাকা: কর কর্মকর্তা দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের কর্মী। সমাজ সেবক থেকে আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা।
যিনি বা যার সম্পর্কে এসব কথা বলা হচ্ছে তার নাম অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ভারতীয় রাজনীতিতে যিনি আবির্ভূত হয়েছেন নতুন ধূমকেতু হিসেবে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান কেজরিওয়াল জীবন শুরু করেছিলেন একজন সাধারণ সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে। ২০০৬ সাল পর্যন্তও তিনি ছিলেন ভারতের কর বিভাগের একজন মাঝারি মাপের কর্মকর্তা। কিন্তু নিয়তির পরিক্রমায় তিনি এখন ভারতের রাজধানী দিল্লির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক। এতটাই জনপ্রিয় যে মধ্যগগনের সূর্যের ন্যায় ভারতীয় রাজনীতিতে দীপ্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও নিজের ছায়ায় ঢেকে দিতে সক্ষম তিনি।
১৯৬৮ সালের ১৬ আগস্ট হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলার সিয়ানি গ্রামে জন্ম নেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ছেলেবেলা থেকেই মেধাবী কেজরিওয়াল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন ভারতের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খড়গপুর আইআইটি থেকে। তার পিতাও ছিলেন একজন ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার।
পিতার কর্মস্থলের সুবাদে শৈশব ও কৈশোর জীবনের বেশিরভাগ সময় কেজরিওয়াল কাটান সোনপাত, গাজিয়াবাদ এবং হিসার সহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন শহরে।
খড়গপুর থেকে পাস করার পর কিছু সময়ের জন্য টাটা স্টিলে কাজ করেন তিনি। এরপর ১৯৯২ সালে কর কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যোগ দেন ইন্ডিয়ান রেভ্যুনিউ সার্ভিসে (আইআরএস)।
অবশ্য সরকারি চাকরি করলেও নিজের অবস্থান থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে সব সময় সোচ্চার থেকেছেন তিনি। তৃণমূল পর্যায়ে ভারতের তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের জন্য রাখেন উল্লেখযোগ্য অবদান।
রাইট অব ইনফর্মেশন আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে দরিদ্র জনগণের ক্ষমতায়নের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৬ সালে পান ফিলিপাইনের সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কার র্যামন ম্যাগসেসাই পুরস্কার।
ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই যুগ্ম কমিশনার হিসেবে অবসর নেন ভারতের আয়কর বিভাগ থেকে। অবসর জীবনে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করেন সমাজ সেবায়। পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পাবলিক কজ রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও। এরপর তিনি যোগ দেন ভারতের নয়া গান্ধী হিসেবে পরিচিত আন্না হাজারের দুর্নীতি বিরোধী ক্যাম্পেইনে। তবে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে আন্না হাজারের সঙ্গে মত পার্থক্যের দরুন তার সঙ্গ ত্যাগ করেন তিনি। এরপর আন্না হাজারের ক্যাম্পেইনের আরও বেশ কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আম আদমি পার্টি।
রাজনৈতিক দল গঠনের এক বছরের মধ্যেই ২০১৩ সালের দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে তিনি একই আসনে দাঁড়িয়ে পরাস্ত করেন তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে। ওই নির্বাচনে আম আদমি পার্টি পায় ২৮টি আসন। পক্ষান্তরে ৩১ আসনে জয়লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মর্যাদা পেলেও তা সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত ছিলো না বিজেপির জন্য। এ পরিস্থিতিতে বিজেপি ঠেকাতে আম আদমি পার্টিকে সমর্থন দেয় কংগ্রেস। কিন্তু দুর্নীতি বিরোধী আইন পাসে সমর্থন লাভে কংগ্রেস সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়ে মাত্র ৪৯ দিন ক্ষমতায় থাকার পর ২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা নিয়ে পদত্যাগ করেন কেজরিওয়াল।
এরপর সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে অংশ নিলেও বিপুলভাবে পরাজিত হন কেজরিওয়াল ও তার দল আম আদমি পার্টি। নিজেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিপরীতে বারানসী থেকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন কেজরিওয়াল। এ পরিস্থিতিতে অনেকেই কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেন।
তারপর যেন ফিনিক্স পাখির মত ধ্বংসাবশেষ থেকে ঘুড়ে দাঁড়ায় কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি। রূপকথার ফিনিক্স পাখি যেমন আগুনে পুড়ে আবারও পুনর্জন্ম লাভ করে, তেমনি নতুন করে পুনর্জন্ম লাভ করেছে দলটি।
মঙ্গলবার ছিলো দিল্লি বিধানসভার ভোট গণনা ও ফল প্রকাশের দিন। সর্বশেষ বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী ৭০ আসন বিশিষ্ট দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে ৬৭টি আসনে এগিয়ে রয়েছে আম আদমি পার্টি। বিজেপি এগিয়ে মাত্র তিনটি আসনে। অপরদিকে মাত্র এক বছর আগে দিল্লির ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসের খবর নেই একটি আসনেও।
আর মাত্র কদিন পরই ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এক বছর আগে এই ১৪ ফেব্রুয়ারিতেই প্রথমবারের মত মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন কেজরিওয়াল।
ভারতীয় মিডিয়ার খবর, ওই ১৪ ফেব্রুয়ারিতেই আবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন কেজরিওয়াল।
ফিনিক্স পাখির পাখা যে এবার অনেক শক্তিশালী তা বলাইবাহুল্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫