ঢাকা: ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে পশ্চিমারা যদি সমঝোতার শর্তপূরণে ব্যর্থ হয় তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে ফিরে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান।
শনিবার (৪ এপ্রিল) স্থানীয় সময় রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এ হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, সমঝোতার ভিত্তিতে জুনে যে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে তার শর্তগুলো পূরণে যদি অন্য পক্ষ ব্যর্থ হয়, তাহলে ইরানও তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে ফিরে যাবে।
জারিফ বলেন, কোনো এক পক্ষের শর্তপূরণের ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে বাকি সবপক্ষই চুক্তি স্থগিত করে দিতে পারে।
ইরান বিশ্বের বুকে নিজের গঠনমূলক ও গর্বিত উপস্থিতি চায় জানিয়ে জারিফ বলেন, চূড়ান্ত চুক্তিতে তার দেশ নিজের পক্ষের যেকোনো প্রতিশ্রুতি পালনে বদ্ধপরিকর।
এসময় সুইজারল্যান্ডের লুসানে অনুষ্ঠিত ইরান ও ছয় বিশ্বশক্তির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সমঝোতার ঘোষণা আসার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হোয়াইট হাউসের বিরুদ্ধে তেহরানের মিথ্যাচারের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেন জারিফ।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, মূলত তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সংবাদ সম্মেলনে উচ্চারিত ‘স্থগিত’ শব্দটির বিরোধিতা করেছেন।
সমঝোতার ভিত্তিতে তেহরান পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমারা ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে বলে মতৈক্যে পৌঁছায়। কিন্তু জারিফ দাবি করেন, কেরি সংবাদ সম্মেলনে নিষেধাজ্ঞা ‘প্রত্যাহার’ করার পরিবর্তে ‘স্থগিত’ করার কথা বলেছেন। সে কারণেই তেহরান চটে গিয়েছিল।
গত ৩০ মার্চ সুইজারল্যান্ডের লুসান শহরে ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত হতে চলা পরমাণু চুক্তির প্রাথমিক ধাপের শেষ পর্যায়ে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের সঙ্গে আলোচনায় বসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরা ফ্যাবিয়াস, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই ল্যাভরভ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
পরদিন ৩১ মার্চ আলোচনার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা আরও কিছু সময় চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ১ এপ্রিলও কোনো ফলাফল না এলে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে আলোচনা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তবে কেরি ২ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। এবং শেষ পর্যন্ত ২ এপ্রিলই আলোচনা শেষে সমঝোতায় পৌঁছা গেছে বলে ঘোষণা আসে।
মতৈক্যে পৌঁছানোর ঘোষণার পরপরই সেটাকে ‘ঐতিহাসিক সমঝোতা’ উল্লেখ করে উচ্ছ্বসিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে বলেন, এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি হতে চলেছে।
এ ঘোষণা আসার পরপরই উল্লাসে ফেটে পড়ে ইরানের জনগণ। মধ্যরাতেই দলে দলে রাজধানী তেহরানের বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আনন্দ প্রকাশ করেন।
যদিও এই চুক্তির বিষয়ে আগাগোড়াই নাখোশ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল। সমঝোতার ঘোষণার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে টেলিফোন করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, এ চুক্তি ইসরায়েলের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই চুক্তি ইরানের ‘আগ্রাসন’ ও ‘সন্ত্রাস’কে উৎসাহিত করবে।
ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত হতে চলা চুক্তিতে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্ত হিসেবে আগামী পনের বছরের জন্য ইরান ইউরেনিয়ামের মজুদ তিন দশমিক ৬৭ শতাংশের বেশি করতে পারবে না বলে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে দেশটিকে তার শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র নতুন করে সাজাতে হবে, যাতে প্লুটোনিয়াম ব্যবহারে কোনো অস্ত্র তৈরি করা না যায়। এছাড়া, ইউরেনিয়াম পরিশোধন ও পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যাও দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে ফেলতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৫
আরএইচ/এইচএ