ঢাকা: অর্থপাচার মামলার ফেঁসে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডির আদিয়ালা কারাগারে দিন গুজরান করছেন দেশটির জনপ্রিয় মডেল আয়ান আলী।
দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় গত ১৪ মার্চ ইসলামাবাদ এয়ারাপোর্টে পাঁচ লাখ ডলারভর্তি স্যুটকেসসহ কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে আটক হওয়ার পর থেকে ২৩ বছর বয়সী আয়ান আলী ওই কারাগারে দিনাতিপাত করছেন।
তবে আয়ান আলী অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেন, বৈধভাবেই ওই অর্থগুলো বহন করছিলেন তিনি।
মামলার আসামি হিসেবে আয়ানকে কারাগারে পাঠালে দুই সপ্তাহ পর তিনি মার্চের শেষে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু সে আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। ফলে আয়ানকে আরও বেশ কিছুদিন আদিয়ালা কারাগারেই কাটাতে হচ্ছে।
এদিকে, কারাগারে আয়ানের দিনাতিপাত নিয়ে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানি মিডিয়ায়। তাকে বিশেষ চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কিনা, কিংবা তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের (ভিআইপি) বন্দির মর্যাদা পাচ্ছেন কিনা- তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জল্পনা-কল্পনার।
সূত্রের বরাতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, আয়ানকে টিভি-ফ্রিজ সম্বলিত একটি ভালো কক্ষে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি প্রতিদিন নতুন একটা করে পোশাক পরিধানের সুযোগসহ বিশেষ মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন।
অবশ্য, কারাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা তারা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানায়, কারাগারের একটি ব্লকে অন্য আরও ১০ নারী বন্দির সঙ্গে সাধারণ বন্দিদশাই পার করছেন আয়ান। তিনি কারাগারের আইন অনুযায়ীই সপ্তাহে দু’বার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
কারাগার কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, তার সঙ্গে বাকি নারী বন্দিদের বেশিরভাগই মাদক চোরাকারবারী ও খুনের মামলার আসামি। তিনি বেশিরভাগ সময়ই তার কক্ষে শুয়ে থাকেন। কখনো কখনো সহঃবন্দিদের সঙ্গে কথাও বলেন।
পোশাক পরিধানের ব্যাপারে অভিযোগ খণ্ডন করে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, অভিযুক্ত কোনো বন্দির জন্যই ড্রেসকোড নেই। ড্রেসকোড কেবল সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য প্রযোজ্য। কাজেই আয়ান তার ইচ্ছেমত পোশাক পরার অধিকার রাখেন। এছাড়া, আয়ান তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে বি-ক্লাস কারা সুবিধার আবেদন করেছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তার প্রাপ্য সুবিধা দিয়েছে।
পাকিস্তান ক্রিমিনাল কোড অনুযায়ী, কোনো বন্দি যদি শিক্ষাগ্রহণে ১৪ বছর অতিবাহিত করে থাকে, তাহলে সে বি-ক্যাটাগরির অন্তর্ভূক্ত হওয়ার যোগ্যতা রাখে। সেক্ষেত্রে উন্নত কক্ষে থাকার ব্যবস্থাসহ বন্দির জন্য একজন ভৃত্যও নিয়োগ করা হয়ে থাকে। তবে, এই নিয়ম শুধু ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ায় আয়ানের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হচ্ছে না বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।
রাওয়ালপিণ্ডি সেনানিবাসের মধ্যে অবস্থিত আদিয়ালা কারাগারে সাড়ে চার হাজার বন্দির বাস। খুন, সন্ত্রাসসহ এদের সবাই কোনো না কোনো মামলার আসামি।
আদিয়ালা কারাগার দেশটির সবচেয়ে বড় কারাগার, যেখানে এর আগেও বেশ কিছু বিতর্কিত বন্দি আটক রাখা হয়। এদের মধ্যে রিমসা অন্যতম। খ্রিস্টান রিমসা ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তি করার দায়ে কারাগারে বন্দি ছিলেন। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
‘আয়ান’ নামেই পরিচিত আদিয়ালা কারাগারে বন্দি পাকিস্তানি ওই সুপারমডেল ১৬ বছর বয়সে ক্যাটওয়াকে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর খুব দ্রুতই তিনি সাড়া ফেলে দেশের অন্যতম সুপার মডেলে পরিণত হন। বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায়ও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আয়ানের অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
আয়ানের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, যদি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়- তাহলে মোটা অংকের অর্থদণ্ডসহ ১৪ বছরের কারাদণ্ড ঘোষিত হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৫
আরএইচ/এইচএ