ঢাকা: দক্ষিণ চীন সাগরকে কেন্দ্র করে অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেছে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সাগরটির ৯০ শতাংশ এলাকাই নিজের বলে দাবি করেছে চীন।
প্রশান্ত মহাসাগরের অংশ দক্ষিণ চীন সাগরের মোট আয়তন ৩৫ লাখ বর্গকিলোমিটার। সাগরটির তীরে দাঁড়িয়ে রয়েছে চীন, তাইওয়ান, ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম। তবে সাগরটির ৯০ শতাংশ এলাকা নিজের বলে দাবি করেছে চীন। এর ফলে সাগরটির ওপর তীরবর্তী বাকি দেশগুলোর দাবি প্রত্যাখ্যানও করা হয়েছে।
খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ দক্ষিণ চীন সাগরে প্রচুর পরিমাণ তেল ও গ্যাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। এছাড়া বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ নৌপরিবহণ এই সাগর দিয়েই হয়ে থাকে। এর ফলে সাগরের ওপর কর্তৃত্বকারী দেশ সবদিক থেকেই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এছাড়া এশিয়া মহাদেশে আধিপত্য বিস্তারেও এই সাগর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলে মনে করা হয়ে থাকে।
জানা গেছে, দক্ষিণ চীন সাগরের যে এলাকায় কৃত্রিম দ্বীপ তৈরির কাজ চলছে, সেখানে নিয়মিতই চলছে মার্কিন নজরদারি। ওই এলাকার আকাশে প্রায়ই দেখা দিচ্ছে দেশটির যুদ্ধবিমান। এছাড়া আশেপাশে ভেসে বেড়াচ্ছে মার্কিন নৌজাহাজ।
চীনা নৌবাহিনী অভিযোগ করেছে, বুধবার (২০ মে) নির্মাণাধীন কৃত্রিম দ্বীপের ওপর দিয়ে একটি মার্কিন নজরদারি প্লেন ইউএসপিএইট-এ পোসেইডনকে আটবার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
তবে চীনের দাবিকে সমর্থন না দিয়ে দক্ষিণ চীন সাগরে দেশটির কার্যক্রমে মার্কিন নজরদারি বেশ অস্বস্তিতেই ফেলে দিয়েছে চীনকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, চীন যা করতে চাইছে, তা বাস্তবায়িত হলে আঞ্চলিক শান্তি-শৃঙ্ক্ষলা বিঘ্নিতই হবে।
উপগ্রহ থেকে পাওয়া সাম্প্রতিক ছবিগুলোতে দেখা গেছে, দক্ষিণ চীন সাগরে নির্মাণাধীন দ্বীপে সেনাবাহিনীর ব্যবহার উপযোগী একটি প্লেন ওঠা-নামার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এ থেকে পেন্টাগনের ধারণা হয়েছে, চীন খুব সম্ভবত সাগর এলাকায় নিজের আধিপত্ব বিস্তারে কোনো পরিকল্পনা এঁটেছে। একারণে সম্প্রতি ওই এলাকায় নজরদারির প্রস্তাবও করে এক পেন্টাগন কর্মকর্তা।
তবে মার্কিন এ পদক্ষেপ মোটেও সহজভাবে নিচ্ছে না চীন। দেশটি এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার নিজেদের বিরক্তির কথা প্রকাশও করেছে।
শুক্রবার (২২ মে) সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হঙ লেই বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন প্লেনের আনাগোনা দুর্ঘটনাও ঘটাতে পারে। আর তাছাড়া চীনা এলাকায় মার্কিন নজরদারি আমাদের সার্বভৌমত্বকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। মার্কিন সেনাবাহিনীর এ ধরণের কাজ সত্যিকার অর্থেই ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘বিপজ্জনক’।
হঙ বলেন, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে এ ধরণের কাজ করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি ডেকে না আনার জন্যও তাদেরকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, চীন নিবীড়ভাবে ওই এলাকায় মার্কিন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর।
পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক, সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেনিয়েল রাসেল ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে এর আগে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক আকাশ ও জলসীমায় অন্যান্য দেশের মতো চলাচল ও প্রশিক্ষণের অধিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন জাহাজ ও প্লেন দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরে চীন যা দাবি করছে, তা আসলে স্বাধীনতা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। সেই সঙ্গে আঞ্চলিক অস্থিরতারও জন্ম দিতে পারে এ ধরণের কার্যক্রম।
এদিকে, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির ট্যাবলয়েড পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস শুক্রবার (২২ মে) এক প্রতিবেদনে বলেছে, ওয়াশিংটন চীনের সঙ্গে উদ্দেশ্য প্রণোদিত অস্থিরতার জন্ম দিচ্ছে। তাদের বর্তমান কার্যক্রম দুই দেশকে মুখোমুখি অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছে।
মার্কিন নজরদারিকে ‘উস্কানিমূলক’ উল্লেখ করে পত্রিকাটি বলে, চীনের এখন প্রতিব্যবস্থার দিকেই নজর দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৫
আরএইচ