ঢাকা: ললিত কাণ্ডে বলি হচ্ছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপির প্রভাবশালী নেতা বসুন্ধরা রাজে। বাঁচার কোনো পথ আর নেই তার।
অভিবাসন সংক্রান্ত আবেদনপত্রে বসুন্ধরা রাজের স্বাক্ষর রয়েছে। সেখানে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে, ‘একটা শর্তেই আমি ললিত মোদির অভিবাসন আবেদনে সমর্থন দিয়ে বিবৃতি দিচ্ছি। তা হল, ভারত সরকার কিছুতেই যেন আমার এ সহায়তার কথা জানতে না পারে। ’
এর আগে আইপিএল দুর্নীতির খলনায়ক ললিত মোদির জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনৈতিকভাবে তদবির করার ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় চাপে পড়েন ভারতের কেন্দ্র সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। এ ঘটনায় সুষমা আত্মপক্ষ সমর্থনে ‘মানবিক কারণে’ সহায়তা দিয়েছেন বলে বিবৃতি দেন। তার স্বীকারোক্তিকে সমর্থন দিয়ে পাশে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা অমিত শাহা।
তবে বসুন্ধরা রাজে কিছুতেই ললিত কাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করছিলেন না। এমনকি ললিত মোদির অভিবাসন আবেদনে সুপারিশ করে তিনি স্বাক্ষর করেছেন, এমন অভিযোগও ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, এমন কোনো আবেদনে আমি সুপারিশ করে স্বাক্ষর করিনি। এমনকি এ প্রসঙ্গে আমি কোনো কথা বলেছি বলেও মনে পড়ে না।
কিন্তু কংগ্রেস শুধু মনে করিয়েই দিল না, সেই আবেদনের শেষ পৃষ্ঠায় বসুন্ধরা রাজের স্বাক্ষর ও শর্ত সবার সামনে উপস্থাপন করে যেন হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিল। সেই সঙ্গে আরও চাপে ফেলে দিল বিজেপিকে। এর ফলে বাইরের চাপের পাশাপাশি দলটির অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
এর আগে বসুন্ধরা রাজের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বিজেপিও জানিয়েছিল, ললিতের আবেদনে বসুন্ধরার স্বাক্ষর থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এসব বিরোধীদের অপপ্রচার।
তবে কংগ্রেসের সংবাদসম্মেলনের পর বিজেপি’র মন্তব্যে আগের মতো আর দৃঢ়তা দেখা গেল না। দলটির মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র বললেন, আবেদনের সুপারিশে স্বাক্ষর রাজের কি না, তা নিশ্চিত নয়। বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।
এর জবাবে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, বসুন্ধরা রাজের স্বাক্ষর যে জাল নয়, সেটা পরিষ্কার। তিনি পদত্যাগ করছেন কি না, এখন আর তা কোনো প্রশ্নের মধ্যেই পড়ে না। কবে পদত্যাগ করছেন, সেটাই মূল ও একমাত্র প্রশ্ন।
কংগ্রেসের এ দলিল উপস্থাপন ললিতের বয়ানকে আরও দৃঢ় করলো বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে ললিত বলেছিলেন, বসুন্ধরা শুধু তার জন্য সুপারিশ করে অভিবাসন আবেদনে স্বাক্ষরই করেননি, তার স্ত্রীর সঙ্গে তিনি দু’বার লিসবনেও গিয়েছেন।
ললিত সেসময় রাজের স্বাক্ষর করা আবেদনপত্রটি দেখাতেও চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, আদালতের অনুমতি পেলে তিনি সবার সামনে তা তুলে ধরবেন।
তবে সে দলিল ললিতের উপস্থাপনের আগেই নিজস্ব সূত্রের মাধ্যমে তা জোগাড় করে ফেলে কংগ্রেস।
অভিবাসন আবেদনপত্রের সুপারিশে স্বাক্ষরের আগে বসুন্ধরা রাজের পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে, ‘আমি ভারতীয় নাগরিক এবং ১৯৫৩ সালের ৮ মার্চ মুম্বাইয়ে আমার জন্ম হয়। আমি গোয়ালিয়রের মহারাজা জর্জ জিভাজিরাও সিন্ধিয়ার মেয়ে। তিনি দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত গোয়ালিয়রের শাসক ছিলেন। বর্তমানে আমি রাজস্থানের বিরোধী দলীয় নেত্রী। ’
আবেদনপত্রে স্বাক্ষরের তারিখ ২০১১ সালের ১৮ আগস্ট। বসুন্ধরা রাজে সেসময় রাজস্থানের বিরোধী দলীয় নেত্রী ছিলেন।
নিজের পরিচয় তুলে ধরার পর আবেদনপত্রে বসুন্ধরা ললিত সম্পর্কে লেখেন, ‘ললিত মোদি ও তার পরিবারকে আমি কয়েক দশক ধরে চিনি। ক্রিকেট নিয়ে তার উৎসাহ ছিল। তিনি খেলাটির আধুনিকায়ন করতে চেয়েছিলেন। ক্রিকেটের সফল বাণিজ্যিকীকরণে তিনি উৎসাহী ছিলেন। ’
এসময় তিনি ললিতের আইপিএল কেলেঙ্কারিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেন। বলেন, ‘নির্বাচনে তাকে সহায়তা দেওয়ায় কংগ্রেস তার ও ললিতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ’
এরপর বসুন্ধরা আবেদনপত্রে ললিতের ব্যাপারে সুপারিশ করে বিবৃতি দেন, ‘ভারতে ললিতকে যে আক্রমণ করা হচ্ছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য একজন সমর্থককে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। ’
এই বিবৃতির নিচেই বসুন্ধরা রাজে স্বাক্ষর করেন। তবে এই পুরো বিবৃতির সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ হল তার এ সুপারিশের বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে না জানতে দেওয়ার শর্ত। আর এ বিষয়টি সামনে চলে আসায় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখন নতুন কোনো উত্তরই খুঁজতে হবে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৫
আরএইচ/
** ললিত কাণ্ডে বেকায়দায় বিজেপি