ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

চাঁদের অক্ষ সরে গেছে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৬
চাঁদের অক্ষ সরে গেছে! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎস্নায় মাতোয়ারা হননি এমন কবি-সাহিত্যিক কিংবা শিল্পমনা মানুষের দেখা মেলা ভার। নিখাদ বেরসিকও জ্যোৎস্না রাতে কখনো কখনো উদাস হয়ে যান।

যে চাঁদকে নিয়ে এতকিছু, বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেই চাঁদই কি না নিজের অক্ষ থেকে সরে গিয়ে পৃথিবীকে দেখাচ্ছে ভিন্ন চেহারা!

বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘দ্য নেচার‘-এ সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। আরিজোনায় প্লানেটারি সায়েন্স ইনস্টিটিউটের গবেষক ম্যাট সিয়েগলার ও তার সহকর্মীরা এটি প্রস্তুত করেছেন। এতে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, শত কোটি বছরে পৃথিবীর একমাত্র এ উপগ্রহের অক্ষ খুব ধীরে প্রায় ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত সরে গেছে।

গবেষণাপত্রে জানানো হয়, নব্বই দশকের শেষ দিকে নাসার লুনার প্রস্পেক্টর মিশনে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে বিজ্ঞানীরা চাঁদের অক্ষের খুব কাছে দু’টি হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ এলাকা চিহ্নিত করেছেন। এ দুই এলাকা শুধু তার অক্ষ সরে যাওয়ার বিষয়টিতেই সাক্ষ্য দিচ্ছে না, সেই সঙ্গে এ উপগ্রহে এক সময় পানি ও বরফ ছিল বলেও ইঙ্গিত করছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদের ভেতরে বরফের পট্টি দু’টো পরস্পরের বিপরীতে অবস্থান করছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর তাদের মধ্যবর্তী যে লাইন, তা সরাসরি চাঁদের কেন্দ্র ভেদ করে চলে গেছে। খুব সম্ভবত এটাই এ উপগ্রহের ঘূর্ণন অক্ষ।

সব হিসেব-নিকেষ করে গবেষণাপত্রটিতে জানানো হয়েছে, শত কোটি বছরে চাঁদ খুব ধীরে নিজের অক্ষ পরিবর্তন করেছে। আর তাই পৃথিবী থেকে এখন তার যে চেহারা দেখা যায়, তা আদতে তার প্রকৃত চেহারা নয়।

এই সরে যাওয়ার ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতই হয়তো এর জন্য দায়ী। চাঁদের যে অঞ্চলে প্রাকৃতিক এ প্রক্রিয়াগুলো ঘটে গেছে, পৃথিবীবাসী তার নাম দিয়েছে ‘প্রোকেলারাম’ বা ঝড়ের সমুদ্র। পৃথিবী থেকে চাঁদের বুকে যেসব গর্ত চোখে পড়ে, সেগুলোর বেশিরভাগই এ অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া চাঁদের এ অংশকে বাকি অংশের তুলনায় উষ্ণ ও হালকাও করে দিয়েছে।

এ ব্যাপারে ম্যাট সিয়েগলার বলেছেন, প্রোকেলারাম অঞ্চলটি চাঁদের প্রথম জীবনে অত্যন্ত সক্রিয় ছিল। আর এ সক্রিয়তার কারণেই উপগ্রহটির অক্ষ ধীরে ধীরে সরে গেছে। শুধু তাই নয়, চন্দ্রপৃষ্ঠে কসমিক রশ্মি পড়লে নিউট্রন কণা লাফাতে শুরু করে। আর হাইড্রোজেনের যে উপস্থিতির চিহ্ন পাওয়া গেছে, তা চাঁদে বরফ পানির সাক্ষী। তবে তা চিরতরে হারিয়ে গেছে। হয়তো গ্রহাণুদের উপর্যুপরি আছড়ে পড়ার কারণেই এমনটা হয়েছে।

চাঁদের এই অঞ্চলেই কেন এত ঘটনা ঘটলো এবং অক্ষ সরে গিয়ে এখানেই কেন সূর্যালোক পড়তে শুরু করলো, সেটা এখন বড় ধরনের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজ্ঞানীদের সামনে।

এর আগেও একবার চাঁদের অক্ষ সরে যাওয়ার দাবি করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে সেবার দাবি করা হয়েছিল, নানা প্রাকৃতিক ঘটনায় উপগ্রহটির অক্ষ ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত সরে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৬
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।