ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভেঙ্গে পড়ছে আইএস, দেড় বছরেই পুরো কব্জায়

রাইসুল ইসলাম, এডিশনাল আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৬
ভেঙ্গে পড়ছে আইএস, দেড় বছরেই পুরো কব্জায়

ঢাকা: আইএসের (ইসলামিক স্টেট) একের পর এক প্রাণঘাতী হামলায় ইউরোপীয় রাজধানীগুলো বিভীষিকা দেখছে। তবে পাল্টা আঘাতও হচ্ছে।

এতে ইরাক ও সিরিয়ায় নিজেদের স্বঘোষিত খেলাফতে ধীরে ধীরে ঘায়েল হচ্ছে আইএস।

সর্বশেষ মার্কিন বিমান হামলায় তাদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা হাজি ইমামের মৃত্যু জঙ্গি সংগঠনটির জন্য বড় একটি ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সিরিয়ায় হাজি ইমামকে জঙ্গিবিরোধী হামলায় হত্যা করা হয়েছে বলে শুক্রবার (২৫ মার্চ) সংবাদ দেয় পেন্টাগন।

আর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইরাক ও সিরিয়ায় গত নয় মাসে যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো সাফল্যের দেখা পায়নি আইএস। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার তোড়ে ক্রমেই কোনায় ঢুকে পড়ছে আইএস। একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছেন তাদের নেতারা।

মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতি তিনটি বিমান হামলায় মারা যাচ্ছে আইএস’র কোনো না কোনো একজন নেতা।

ওদিকে রাশিয়াও রয়েছে এই হামলায় সামিল। রুশ পক্ষ সহযোগিতা দিচ্ছে সিরিয়ার সেনাদের। রুশ বিমান হামলার ছত্রছায়ায় গত বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক পালমিরা থেকে আইএসকে হটিয়ে শহরটি দখলে নেয় সিরীয় সেনারা। প্রায় একই সময়ে উত্তর ইরাকে মার্কিন বিমান হামলার সহায়তা নিয়ে ইসলামিক স্টেটকে হটিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রামের দখল নেয় ইরাকি বাহিনী। এগুলো সবই এই সেদিনও ভীতিকর এই সংগঠনটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে আসার লক্ষণ।

ইরাকি সামরিক বাহিনীর আইএস বিরোধী অভিযানের প্রধান লে.জেনারেল আব্দুল ঘানি আল আসাদি বলেন, আইএস এখন আর লড়াই করছে না। তারা শুধু গাড়ি বোমা পাঠাচ্ছে। তাদের যোদ্ধারা লড়াই না করেই যুদ্ধক্ষেত্রে ত্যাগ করছে। যখন আমরা তাদের ঘিরে ফেলছি তখন তারা হয় আত্মসমর্পণ করছে আর না হলে বেসামরিক জনগণের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তাদের নৈতিক মনোবল ঝাকুনি খেয়েছে।

এছাড়া অনেক আইএস যোদ্ধাই এখন আর তাদের নেতাদের নির্দেশ পালন করতে চায় না, বলেন আল আসাদি।

তবে ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনও রয়েছে আইএস’র দখলে। ইউরোপের রাজধানীগুলোকে টার্গেট করে একের পর এক চোরাগোপ্তা আত্মঘাতি হামলা চালাচ্ছে। তাতে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটছে। আর এসবের সবগুলোই সংগঠিত আক্রমণ। প্যারিসের পর সেদিনই বেলজিয়ামে হামলা চালিয়ে আইএস তার গোপণ শক্তিরই নজির দেখাচ্ছে।

ভয়াবহ দিকটি হচ্ছে, আরব বিশ্ব ছাড়াও এই জঙ্গি সংগঠনের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দেশে। আর আত্মঘাতী হামলা চালানোর মতো একটি ভয়াবহ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে আইএস একটি ভীতিকর সংগঠন হয়ে থাকছে। ইরাক ও সিরিয়া ছাড়াও প্যারিস, বেলজিয়ামের হামলাগুলো আত্মঘাতি বলেই তা চরম ভয়াবহত ডেকে আনছে।

দখলিকৃত এলাকা ধরে রাখতে সক্ষম না হলেও এই সব হামলার মাধ্যমে ইরাক-সিরিয়ার সাধারণ মানুষ ও সরকারি কর্তৃপক্ষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী আতঙ্ক ছড়ানোর ক্ষেত্রে সফল হচ্ছে আইএস।

তবে মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন, আইএস বিরোধী অভিযানে নামার ১৮ মাস পরে এখন একটু একটু করে সফল হচ্ছেন তারা।

ইরাকে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর সামরিক মুখপাত্র কর্নেল স্টিভ ওয়ারেন বলেন, সময়ের সাথে সাথে আমাদের আঘাতের প্রক্রিয়া জোড়ালো হয়েছে। আমরা আরও বেশি কার্যকর আক্রমন চালাতে পারছি। আমরা এখন আগের চেয়ে সুনির্দিষ্টভাবে ওদের শনাক্ত করতে পারছি এবং হামলা চালিয়ে তাদের ধ্বংস করতে পারছি। ওরা এখন স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারছে না। অনেক দিন হলো ওরা কোনো একটি যুদ্ধেও জিততে পারেনি। তাদের জন্য সময় এখন কঠিন কারণ, আমরা বেছে বেছে তাদের নেতাদের ওপর হামলা চালাচ্ছি।

২০১৪ সালে আইএস যখন সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে ছিলো তখন থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গি সংগঠনটির দখল থেকে ৪০ শতাংশ ভূমি মুক্ত করা গেছে বলে জানান স্টিভ ওয়ারেন।

আইএস এর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আনবার প্রদেশেও গত এক সপ্তাহে মার্কিন সমর্থন পুষ্ট ইরাকি বাহিনী ইউফ্রেতিস নদী বরাবর ২৫ মাইল এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। এছাড়া সিরিয়ার পূর্বঞ্চলেও আইএস এর কবল থেকে শাদাদি শহর এবং তৎসংলগ্ন প্রায় এক হাজার বর্গমাইল এলাকা দখল করে নেয় কুর্দি সশস্ত্র সংগঠন ওয়াইপিজে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এলাকা হারানোর মধ্য দিয়ে আইএস যতটা না ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের শীর্ষ নেতাদের হারিয়ে। দিন কয়েক আগে মার্কিন বিমান হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আইএস এর স্বঘোষিত খলিফা ওমর আল বাগদাদি। তবে মারাত্মক জখম নিয়ে পালাতে হয়েছে তাকে। এর পরপরই মারা যান সংগঠনটির সবচেয়ে সফল সামরিক কমান্ডার আবু ওমর আল শিশানি। সর্বশেষ শুক্রবার নিশ্চিত হয় সংগঠনটির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা হাজি ইমামের মৃত্যুর বিষয়টি।

হাজি ইমামকে আইএসের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ধারণা করা হচ্ছিলো তিনিই হবেন ওমর আল বাগদাদির উত্তরসূরী। বাগদাদির মৃত্যু হলে তিনিই হতেন তাদের পরবর্তী খলিফা।

এ ব্যাপারে ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নেয়ার ইস্ট পলিসির বিশেষজ্ঞ মাইকেল নাইটস বলেন, আইএস এখন ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে। তারা খুব বেশি বড় সংগঠন নয়। যদি একই সঙ্গে কয়েকটি যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের চেপে ধরা যায়, তারা বেশি দিন প্রতিরোধ করতে পারবে না।

আগামী বছরের শেষ নাগাদ সংগঠনটির হাত থেকে সব ভূমি দখলমুক্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৬
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।