ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আনোয়ার ইব্রাহীমের সঙ্গে মাহাথিরের করমর্দনে সরকারের অশনি সংকেত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৬
আনোয়ার ইব্রাহীমের সঙ্গে মাহাথিরের করমর্দনে সরকারের অশনি সংকেত

ঢাকা:  মালয়েশিয়ার আদালতে দেশটির দুই হেভীওয়েট রাজনীতিক আনোয়‍ার ইব্রাহিম ও মাহাথির মোহাম্মদের করমর্দনের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন মিডিয়ায়। ওই করমর্দনের ঝাঁকি ক্ষমতাসীনদেরও নাড়িয়ে দেবে কি না তা নিয়েও শুরু হয়েছে জোর আলোচনা।

বলা হচ্ছে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ‍বিরুদ্ধে এক জোট হতে যাচ্ছেন দুই সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী মাহাথির মোহাম্মদ ও আনোয়ার ইব্রাহীম।

নাজিব রাজাকের ওপর এক সময় আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের আশীর্বাদ থাকলেও বর্তমানে তিনি নাজিব সরকারের সবচেয়ে বড় সমালোচকদের একজন।

অপরদিকে মাহাথির মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠ সহচর থেকে ঘোর শত্রুতে পরিণত হওয়া মালয়েশিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমও নাজিব রাজাকের কঠোর বিরোধী।

মাহাথির ও আনোয়ার ইব্রাহীম দুইজনকেই মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে ‘হেভিওয়েট’ ব্যক্তিত্ব হিসেবে ধরা হয়। এই পরিস্থিতিতে দুইজনের ঐক্যের প্রক্রিয়া ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সদ্য পাস হওয়া জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ আইন-২০১৬ মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক।

এই জাতীয় নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতার সূত্র ধরে মাহাথির ও আনোয়ার ইব্রাহীমের সম্পর্কের বরফ গলছে।

নতুন নিরাপত্তা আইনে ব্যাপক ক্ষমতা পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক।   সদ্য পাস হওয়া এই আইনের বিরোধিতা করে মালয়েশিয়ার আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম।

আকস্মিকভাবে তাকে সমর্থন জানাতে শুনানির দিন আদালত চত্বরে আসেন মাহাথির মোহাম্মদ। শুধু তাই নয় ১৮ বছরের ব্যবধানে দু’জনের মধ্যে দেখা সাক্ষাতও হয়। অথচ আজ থেকে ১৮ বছর আগে এই আনোয়ার ইব্রাহীমকেই জেলে পুরেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।

মাহাথির যখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন তখন তার ডেপুটি হিসেবে কর্মরত ছিলেন আনোয়ার। ক্ষমতার অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে ১৯৯৮ সালে এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আনোয়ারকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি বহিষ্কার করা হয় দল থেকেও। পাঠানো হয় কারাগারে। তখন থেকেই দু’জন দু’জনার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী।

আদালতে দীর্ঘ ১৮ বছর পর সাক্ষাতে তারা পরস্করের সঙ্গে হাত মেলান। একান্তে কথা বলেন প্রায় ৪৫ মিনিট। পুরনো রেষারেষি পেছনে ফেলে এসেছেন বলে এ সময় সাংবাদিকদের জানান মাহাথির।

মাহাথির ও আনোয়ারের এই ঐক্য মালয়েশিয়ার রাজনীতির নতুন মোড় বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের ধারণা দুই নেতা আবার এক হলে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে দেশটির রাজনীতিতে।

নাজিব সরকারের ক্ষমতার বর্তমান মেয়াদ শেষে ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ার জাতীয় নির্বাচন। ওই নির্বাচনের আগে এই দুইজনের সাক্ষাতকে তাই দেখা হচ্ছে গেমচেঞ্জার হিসেবে।

এদিকে মাহাথির ও আনোয়ারের এ ‍সাক্ষাতে স্বভাবতই উদ্বিগ্ন নাজিব রাজাকের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড মালয়েস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইএমএনও) পার্টির নীতি নির্ধারকরা। তাদের ধারণা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব ও তার সরকারকে উৎখাতের জন্য এ চাল দিয়েছেন ধূর্ত রাজনীতিক মাহাথির।

এ পরিস্থিতিতে এখন দেখার বিষয় কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়। তবে যদি সত্যিই সত্যিই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মালয়েশিয়ার রাজনীতির দুই মহারথী আনোয়ার ইব্রাহীম ও মাহাথির মোহাম্মদের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়, তবে তা নাজিব রাজাকের জন্য অশনি সংকেত তা বলাই বাহুল্য।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৬
আরএইচএস/আরআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।