এরপর...সিরিয়ান, ইরাকি, তিউনিসিয়ান, ইউরোপিয়ান...আইএসের সব রকমের লোকের পাশবিক লালসার শিকার হতে হয়েছে। কী যে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে! প্রতিটা মুহূর্তে মনে হয়েছে, আমাদের মেরে ফেলা হয় না কেন, কেন আমাদের এভাবে তিলে তিলে নির্যাতন করা হচ্ছে?
ঠিক এভাবেই ইরাকে জিম্মি থাকা দিনগুলোর কথা স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন নাদিয়া মুরাদ।
তাকে তিন বছর আগে ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে উত্তর ইরাকের কোজো এলাকা থেকে ধরে নিয়ে আইএসের একটি পক্ষের কাছে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয় আরেকটি পক্ষ। অনেক কষ্ট-সংগ্রাম-কৌশল করে কয়েক মাস পর পালিয়ে আসেন নাদিয়া।
২৪ বছর বয়সী নাদিয়া বলছিলেন, ওরা (আইএস) এতো নিষ্ঠুর, নির্বিচারে পাশবিক লালসা চরিতার্থ করে। কিশোরী-তরুণী-বয়স্ক...ভয়ানক সেসব দিন। কেউ সেখান থেকে পালিয়ে যেতে চাইলে তাকে বোমায় উড়িয়ে দেয়।
তিনি স্মরণ করেন, তার সঙ্গে লামিয়া বাশার (১৯) নামের এক তরুণীকে ধরে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল। সেই তরুণী যৌন নির্যাতন সইতে না পেরে আইএসের ঘাঁটি থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে তিনি একটি চোখ হারিয়ে ফেলেন। বর্তমানে তিনি এক চোখে দেখতে পান না। তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও বিকৃত হয়ে গেছে ওই বিস্ফোরণে।
নাদিয়া বলেন, ওদের হাতে বন্দি হওয়ার পর সব নারীই মনে মনে ভেবে রাখে যে পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও হয়তো হত্যা করা হবে। কিন্তু ওরা নারীদের তিলে তিলে শেষ করতে ব্যবহার করে। এ ভয়ানক অভিজ্ঞতা।
আইএসের ঘাঁটি থেকে পালিয়ে বেরোনোর পর ২০১৫ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্যানেলের সামনে নিজের ভয়ানক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন নাদিয়া।
নিপীড়িত-নির্যাতিত সেই নাদিয়া এখন কাজ করছেন ইয়াজিদি সম্প্রদায়সহ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির শরণার্থীদের আইনজীবী হিসেবে। মানবাধিকার আদায়ে এই ভূমিকার জন্য তাকে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সম্মানজনক শাখারভ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
নাদিয়া সম্প্রতি তাকে অপহরণ করে নেওয়ার সেই কোজো গ্রামে ফিরেছেন। সেখানে একটি স্কুলে নিজের ভয়ানক স্মৃতি স্মরণ করেন তিনি। বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। পুরো কোজো এলাকা এখন গণকবরে ভরা। আইএস এখানকার পুরুষদের কীভাবে নির্বিচারে হত্যা করেছে, তা ভেবেই শিউরে ওঠেন তিনি।
নাদিয়ার মতে, বর্তমানে ৩ হাজারেরও বেশি নারী আইএসের হাতে যৌনদাসী হিসেবে বন্দি রয়েছে। আইএস এই হতভাগ্যদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছে...ইচ্ছেমতো জায়গায় বিক্রি করছে মধ্যযুগীয় কায়দায়।
দুঃসময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আসা নাদিয়া চান, আইএসের এই বর্বরতা বন্ধে বিশ্ববাসী ঐক্যবদ্ধ হোক। আর কোনো নাদিয়া বা লামিয়ার ভাগ্যে যেন এমন ভয়ঙ্কর স্মৃতি জড়িয়ে না যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৭
এসএইজে/এইচএ/