ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

জিম্বাবুয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগবা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৭
জিম্বাবুয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগবা শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এমারসন নানগাগবা (ছবি দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন)

হাজার-হাজার জনতার ভিড়। উচ্ছ্বসিত সবাই। প্রত্যেকের কণ্ঠে নতুন দিনের প্রত্যাশার সুর। এরই মধ্যে হলো শপথগ্রহণ। জিম্বাবুয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট হলেন ৭৫ বছর বয়সী এমারসন নানগাগবা।

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় বিকেলে (স্থানীয় সময় সকাল) নানগাগবা শপথ নেন। রাজধানী হারারের জাতীয় স্টেডিয়ামে শপথ অনুষ্ঠান হয়েছে।

১৯৮০ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি হলেন দেশটির দ্বিতীয় কমান্ডার ইন চিফ।

দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জেডবিসি (জিম্বাবুয়ে ব্রডকাস্টিং করপোরেশন) শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করেছে। স্টেডিয়ামে বসে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ তা দেখেছেন। কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর শপথগ্রহণ হয়েছে। এতে জিম্বাবুয়ের উন্নতিতে আত্মনিয়োগের কথা বলেছেন নানগাগবা। পরে জাতীয় সংগীত এবং নাচ-গানের আয়োজন ছিল। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে উপস্থিত ছিলেন না।

প্রাণ ভয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমানো নানগাগবা বুধবার (২২ নভেম্বর) দেশে আসেন। দেওয়া হয় উষ্ণ সংবর্ধনা। বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ, ভক্ত, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সেনা সদস্যের প্রতিনিধিরা। সেসময় যারা নানগাগবার সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের বরাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে তার প্রধান কাজ হবে দেশকে আরও গণতান্ত্রিক হিসেবে পরিণত করা।

এছাড়া নানগাগবা শপথের আগে বলেছেন, দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে সুস্থ আছেন। তার কোনো ক্ষতি হবে না বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। শপথগ্রহণ শেষে স্ত্রীকে নিয়ে সংবর্ধনায়...নানগাগবার রাজনৈতিক দল জানু-পিএফ পার্টির (জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন-প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট) নেতারা বলছেন, সবাই অপেক্ষায় রয়েছেন নতুন কিছুর জন্য। এর মধ্যদিয়ে নতুনধারায় যাবে দেশ। কারণ একশাসন থেকে মুক্ত হলো অফ্রিকা মহাদেশের এই রাষ্ট্র।

মুগাবের যুগাবসান
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দীর্ঘ প্রায় ৩৭ বছরের একশাসনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে রবার্ট মুগাবে পদত্যাগ করেন। এর পরপরই পুরো দেশে আনন্দ মিছিল ও শোভাযাত্রা শুরু হয়। সাধারণ মানুষ যেমন রাস্তায় নামেন তেমনি সংসদ সদস্যরাও আনন্দ প্রকাশ করেন।

মুগাবের বিরুদ্ধে সংসদে ওইদিনই অভিশংসন প্রস্তাব আনতে যাচ্ছিল তার নিজের দল ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি। দলের সিনিয়র নেতা পল মাংওয়ানা বলেছিলেন, অভিশংসনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে অন্তত দুই দিন লাগতো।

প্রক্রিয়া শুরুর আগেভাগেই পদ থেকে সরে দাঁড়ান এক সময়কার তুমুল জনপ্রিয় এই নেতা। ১৯৮০ সালে স্বাধীনতার পর থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। বর্তমানে তার বয়স ৯৩ বছর। স্টেডিয়ামে প্রচুর মানুষজন

ঘটনার সূত্রপাত
গত ৬ নভেম্বর (সোমবার) ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাগবাকে অপসারণের পর জিম্বাবুয়ের রাজনীতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি। সেনাবাহিনীর ‘ঘনিষ্ঠজন’ বলে পরিচিত ৭৫ বছর বয়সী নানগাগবাকে ৯৩ বছর বয়সী মুগাবের উত্তরসূরী ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে মুগাবের ৫২ বছর বয়সী স্ত্রী গ্রেস মুগাবেও রাজনীতির ময়দানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে-পড়ে লাগেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেস তার উচ্চাভিলাস থেকে মুগাবেকে বাধ্য করেন নানগাগবাকে অপসারণ করতে। তারপর ১৩ নভেম্বর (সোমবার) সেনাপ্রধান জেনারেল কনস্ট্যান্টিনো চুইঙ্গা সংকট সমাধানে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে প্রস্তুত বলে হুঁশিয়ারি দেন। ১৪ নভেম্বর (মঙ্গলবার) রাস্তায় নামে সেনাবাহিনীর চারটি ট্যাংক। ১৫ নভেম্বর (বুধবার) সকাল থেকেই রাস্তায় রাস্তায় দেখা যায় সেনাটহল। সেনাবাহিনী ঘোষণা দেয়, তারা মুগাবের আশপাশের অপরাধীদের সরাতে অভিযানে নেমেছে। তবে এটা কোনো অভ্যুত্থান (ক্যু) নয় বলেও দাবি করে তারা।

সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ
সেনাবাহিনীর রক্তপাতহীন এমন ‘অভ্যুত্থান’র পর এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। খবর ছড়ায়, সেনারা মুগাবেকে ‘গৃহবন্দি’ করে রেখেছে। আর গ্রেস দেশে ছেড়ে পালান প্রতিবেশী দেশ নামিবিয়ায়। ১৭ নভেম্বর (শুক্রবার) হারারের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দেখা যায় মুগাবেকে।  

সেসময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, সেনাবাহিনী মুগাবেকে আর ক্ষমতায় দেখতে চাইছে না। সেজন্য তাদের ইন্ধনে হারারেতে শুরু হয় মুগাবে-বিরোধী বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ থেকে অশীতিপর প্রেসিডেন্টকে সরে যাওয়ার দাবি তোলা হয়। একইসঙ্গে নানগাগবার হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত করার দাবিও ওঠে বিক্ষোভে। তারই প্রতিফলন আসে জানু-পিএফের বৈঠক থেকে; মুগাবেকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়। শেষে তিনি পদ ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর নানগাগবা দেশে ফিরে আসেন। শপথ নিয়ে হয়ে যান নতুন রাষ্ট্র নায়ক।

আরও পড়ুন
**শুক্রবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন এমারসন নানগাগবা
**মুগাবেকে পদত্যাগে উদাত্ত আহ্বান নানগাগবার
**দল থেকে বহিষ্কার মুগাবে
**জাতির উদ্দেশে ভাষণ, ক্ষমতায় থাকতে চান মুগাবে!
** রোববারই অপসারণ হচ্ছেন মুগাবে!
** মুগাবেকে ক্ষমতা ছাড়তে বললো তার দলও
** মুগাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে প্ররোচিত করছে সেনাবাহিনী
** গৃহবন্দি থেকে জনসম্মুখে মুগাবে
** সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন মুগাবে
** মুগাবে নিজেই করছেন পদত্যাগ!
** মুগাবে ‘গৃহবন্দি’, দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন স্ত্রী গ্রেস!
** মুগাবে আটক, নানগাগবাকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা সেনাবাহিনীর!
** জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, ক্যু’র অভিযোগ নাকচ
** মুগাবে-সেনাপ্রধান পাল্টা বক্তব্য, রাস্তায় জলপাই ট্যাংক
** ‘অবাধ্য’ ভাইস প্রেসিডেন্টকে বহিষ্কার করলেন মুগাবে

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৭/আপডেট ১৭০০ঘণ্টা
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।