ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মালদ্বীপের ঘটনায় বিব্রত ভারত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৮
মালদ্বীপের ঘটনায় বিব্রত ভারত মালদ্বীপে দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। ছবি-সংগৃহীত

সার্কের সদস্য দেশ মালদ্বীপে জরুরি অবস্থা জারি করার ঘটনাকে ‘চরম বিব্রতকর’ ও ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে বর্ণনা করেছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্র ভারত। ভারতের ভাষায়, এহেন পরিস্থিতিতে সে ‘ডিসটার্বড’।

সংবাদ সংস্থাগুলো জানায়, মঙ্গলবার মালদ্বীপের নির্বাসিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ তার দেশে বর্তমানে চলমান চরম উত্তপ্ত নেতিবাচক রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ভারতের সাহায্য প্রার্থনা করে জরুরি বার্তা পাঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতেই নয়াদিল্লির তরফ থেকে দিনশেষে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হলো।

মালদ্বীপ পরিস্থিতি নিয়ে এটাই ভারতের তরফে প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া।  প্রথমবারের মতো দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় নয়াদিল্লি বলেছে, মালদ্বীপে জরুরি অবস্থা ঘোষণায় ভারত চরম বিব্রতবোধ করছে। পাশাপাশি সে সেখানকার ‘‘পরিস্থিতিকে  সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে’’।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়। তাতে মালদ্বীপের প্রধান বিচারপতিসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের গ্রেফতার এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রুদ্ধ করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

এর আগে শ্রীলংকায় নির্বাসিত মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ নিজ দল মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টির মাধ্যমে নয়াদিল্লির কাছে জরুরি সাহায্য কামনা করে একটি বার্তা পাঠান।

সে বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুম, প্রধান বিচারপতি আবদুল্লাহ সাঈদ ও অপর বিচারপতি আলী হামিদসহ আটক সবাইকে মুক্ত করে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা চাই ভারত তার সামরিক বাহিনীর কন্টিনজেন্টসহ রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করুক। আমরা (মালদ্বীপে) ভারতের দৃশ্যমান উপস্থিতি চাইছি। ''

বার্তায় তিনি আরও বলেন, "তাকে (প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম) ক্ষমতা থেকে অবশ্যই সরিয়ে দিতে হবে। বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি, বিশেষ করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের  প্রতি মালদ্বীপের জনগণের পক্ষ থেকে এটা এক ন্যায়সঙ্গত অনুরোধ। ''

মোহাম্মদ নাশিদ সার্কের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্র ভারতের সামরিক উপস্থিতি ও সহায়তা চাওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাও চান।

মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন স্বৈরাচারি ইয়ামিন সরকারের সঙ্গে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন বন্ধ করে দেয় তিনি সেজন্যও যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, মোহাম্মদ নাশিদই (৫০) হচ্ছেন মালদ্বীপের ইতিহাসে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট।

ভারতের সাহায্য চেয়ে পাঠানো বার্তায় সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ জরুরি অবস্থা জারির সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন যে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন তা মালদ্বীপে সামরিক শাসন জারি করারই নামান্তর। কেননা তিনি মৌলিক অধিকার নিষিদ্ধ করেছেন, সুপ্রিম কোর্টের সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছেন। তার এই ঘোষণা অসাংবিধানিক এবং বেআইনি। মালদ্বীপের কোনো নাগরিক এহেন অবৈধ বেআইনি আদেশ মানতে বাধ্য নন। ’’

প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম সোমবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর পুলিশ ও সৈন্যরা মধ্যরাতে প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ সৎ ভাই সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুমকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।

এছাড়া  সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ দুই বিচারপতিকেও মঙ্গলবার ভোরে সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে হানা দিয়ে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা তাদের বাসভবন ছেড়ে সুপ্রিম কোর্টভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

সকল বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নামে করা মামলা ও আটকাদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে তাদের মুক্তি ও অব্যাহতি দান এবং প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করার জন্য বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের চারজন বিচারপতির বেঞ্চ আদেশ দিয়েছিল। গ্রেফতারকৃত দুই বিচারপতিও সেই বেঞ্চে ছিলেন।

এরা হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি জাস্টিস আবদুল্লাহ সাঈদ ও জাস্টিস আলী হামিদ। এছাড়া বিচার বিভাগীয় এক কর্মকর্তাকেও এসময় গ্রেফতার করা হয়। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

এভাবে ক্রমাগত গ্রেফতার, আটক করা, মিথ্যা মামলা দেওয়াসহ দেশজুড়ে নানা দমনমূলক ব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন গাইয়ুমের সরকার।

পার্লামেন্ট ও সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে কার্যত অচল করে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন গাইয়ুম। সব মিলিয়ে দেশটিতে এখন ক্যু পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

মালদ্বীপ বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হুসনু আল সৌদ রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘জরুরি অবস্থার অর্থই হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের সব কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়া। এর অর্থ বিচার বিভাগের দায়িত্বে কেউ আর নেই। বিচার বিভাগ কার্যত অরক্ষিত। ’’

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৮

জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।