ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের ইস্পাত-ট্যারিফে দুনিয়া তোলপাড়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪০ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৮
ট্রাম্পের ইস্পাত-ট্যারিফে দুনিয়া তোলপাড় চীনের শানডং প্রদেশের একটি রফতানিমুখী ইস্পাত কারখানায় কর্মরত একজন শ্রমিক। ছবি-সংগৃহীত

ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবিশ্বাস্যমাত্রায় (২৫ শতাংশ) ইমপোর্ট ট্যারিফ আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র-অমিত্র সব রফতানিকারক দেশই ক্ষুব্ধ। তারা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএম এফ)  সমালোচকের কাতারে নাম লিখিয়েছে।

আইএমএফ’র মহাপরিচালক রবের্তো আসেভেদো শুক্রবার এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইস্পাতের ওপর ২৫ শতাংশ এবং অ্যালুমিয়ামের ওপর ১০ শতাংশের বেশি আমদানি শুল্ক আরোপের যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, তা হবে আত্মঘাতী। কারণ এতে করে আর সব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এক বড় ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।

চাপিয়ে দেয়া এই বাণিজ্যযুদ্ধে কারোরই স্বার্থ হাসিল হবে না।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের একরোখা ও রাগী স্বভাবের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা মনে করেন না। ‘টুইটবাতিকগ্রস্ত-প্রেসিডেন্ট’ বলে পরিচিতি পাওয়া ট্রাম্প শুক্রবার এক টুইটে বলেও দিয়েছেন সেকথা: ‘‘ট্রেড ওয়ার্স আর গুড (বাণিজ্যযুদ্ধ ভালো)। ’’

আইএমএফ ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এই পদক্ষেপ হঠকারী। এতে কোনো পক্ষেরই লাভ হবে না। বরং সব পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রফতানিকারক দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক নষ্ট হবে।

আইএমএফ  আরও বলেছে, ট্রাম্প বাড়তি ট্যারিফ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষার কথা বলেছেন। ঠিক একই যুক্তিতে অন্যসব দেশও মার্কিন পণ্যের ওপর বাড়তি ট্যারিফ আরোপ করে নিজেদের জাতীয় স্বার্থরক্ষার যুক্তি দেখাবে।

বলা বাহুল্য, এরই মধ্যে আইএমএফ’র হুঁশিয়ারি (দেবার আগেই) সত্য প্রমাণ হতে শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিকটতম প্রতিবেশী ও সবচেয়ে কাছের মিত্রদেশ কানাডা। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাতের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক। বছরে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের ইস্পাত রফতানি করে কানাডা। তাই ইস্পাতে ২৫ শতাংশ ট্যারিফ আরোপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কানাডা।  

ক্ষুব্ধ কানাডা তাই বলে দিয়েছে, বাড়তি এই ট্যারিফ সীমান্তের দুদিকেই ক্ষতি বয়ে আনবে। এখানেই শেষ নয়। কানাডা আরো বলে দিয়েছে, তারাও মার্কিন পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক ট্যারিফ আরোপ করবে।

শুধু কানাডা নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মেক্সিকো, জাপান, ব্রাজিল, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, তাইওয়ান, তুরস্কসহ রফতানিকারক দেশগুলো মার্কিন পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক ট্যারিফ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।  

ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে শুক্রবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, বাড়তি এই আকাশছোঁয়া ট্যারিফ ‘‘পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য’’।  

খবরে প্রকাশ, ইইউভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ বাণিজ্য কর্মকর্তারাও সব মার্কিন পণ্যের ওপর গণহারে ২৫ শতাংশ ট্যারিফ আরোপের ছক কষছেন। অর্থাৎ ৩৫০ কোটির বেশি ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে ট্যারিফ বসাবেন তারা।

আগামী সপ্তাহেই ট্রাম্প একতরফাভাবে তার এই হঠকারি ট্যারিফ পরিকল্পনাটি পাস করতে পারেন। সেক্ষেত্রে অন্য দেশগুলোও সে অনুয়ায়ী প্রতিশোধের পথ বেছে নেবে।

আইএমএফসহ সবাই বলছে, এই ট্যারিফ আরোপে আখেরে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও লাভ হবে না; ট্রাম্প তখন টুইট করে বলেছেন, ‘‘একটি দেশ অন্যসব দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গিয়ে যদি সবার কাছেই বিলিযন ডলার গচ্চা দেয়, তখন বাণিজ্যযুদ্ধ (শুরু করাই) উত্তম কাজ। আর তাতে জয় পাওয়াও সহজ ব্যাপার। দৃষ্টান্তস্বরূপ, আমরা যখন কোনো একটি দেশের(চীন)  কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতির শিকার হই, তখন তাদের চেহারা কেবল খোলতাই হতে থাকে। তখন তাদের সঙ্গে ব্যবসা না করলেই আমরা জয়ী। এটাই সহজ জয়ের পথ। ’’ 

কিন্তু ট্রাম্প ইচ্ছে করে যে বাণিজ্যযুদ্ধে নামার পাঁয়তারা করছেন, তাতে তার জয় পাওয়া এতো সহজ হবে না। উল্টো তার এই সিদ্ধান্তের পরিণতি হিসেবে গোটা বিশ্বের বাণিজ্যিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবারই আশঙ্কা। এতে করে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্ল্যু টি এ) পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

বাণিজ্যের বাধা দূর না করে ‘ঢিল কা জবাব পাটকিল’-নীতিতে প্রতিশোধমূলক নতুন নতুন বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা শুরু হলে দুপক্ষের কোম্পানিগুলোই ক্ষতির শিকার হবে। আর তার সুদূরপ্রসারী কুপ্রভাব গোটা বিশ্বের বাণিজ্য-ব্যবস্থার ওপর গিয়ে পড়বে।

ট্রাম্পের সমালোচকরা বলছেন, গলাকাটা ট্যারিফ আরোপ করে ট্রাম্প যদি ভেবে থাকেন যে, তাতে আমেরিকানদের চাকুরির সুযোগ সংরক্ষণ করা যাবে, তাহলে তিনি ভুল করছেন। বরং এর ফলে পণ্যমূল্য বেড়ে গিয়ে সাধারণ ভোক্তাদের পকেট কাটা যাবে।

তবে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস সম্ভাব্য পণ্যমূল্য বৃদ্ধিকে খুব বড় ব্যাপার বলে মনে করেন না। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘‘সব দেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের পথ বেছে নেয়, তাহলে গোটা বিশ্বের বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় এর বিশাল বিরূপ প্রভাব পড়বে। ’’

জাপান আয়রন অ্যান্ড স্টিল ফেডারেশনের চেয়ারম্যান কোসেই শিনদো বলেন, ‘‘এতে করে যে নেতিবাচক চেইন রিঅ্যাকশন শুরু হবে, তাতে করে শুধু ইস্পাতে নয়, অন্যসব পণ্যেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। ’’

মার্কিন কোম্পানিগুলোও এরই মধ্যে বিপদ আঁচ করতে পারছে। বিশেষ করে বিয়ারের মতো পানীয় উৎপাদক কোম্পানিগুলো ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে ভালোভাবে নেয়নি। কেননা ক্যানড বিয়ার উৎপাদনে তাদেরকে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করতে হয়।

কিন্তু ট্রাম্প তাতে থামবেন না। না থামলে ‘‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে গিয়ে পড়বেই’’।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা,  মার্চ ০৩, ২০১৮

জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।