ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘বস্তুকে ছাপিয়ে মন’: হকিংকে নিয়ে বিজ্ঞানী পেনরোজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৮
‘বস্তুকে ছাপিয়ে মন’: হকিংকে নিয়ে বিজ্ঞানী পেনরোজ ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত ও তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা বিভাগে নিজের অফিসকক্ষে হুইল চেয়ারে বসা স্টিফেন হকিং । ছবি-সংগৃহীত

স্টিফেন হকিং আর রজার পেনরোজ। এই দুই বিজ্ঞানী ছিলেন পরস্পরের সতীর্থ, বন্ধু ও গুণগ্রাহী। দুজনের কয়েক দশক দীর্ঘ বন্ধুত্বের উপস্থিতি থেকে ঝরে পড়লেন হকিং। বুধবার ১৪ মার্চ হকিং চলে গেলেন দুনিয়া থেকে তার শারীরিক উপস্থিতির পালা চুকিয়ে।

প্রিয় বন্ধু ও সতীর্থ হকিংয়ের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে লিখলেন রজার পেনরোজ ‘দ্য গার্ডিযান’ পত্রিকায়। লেখাটির শিরোনাম:  Stephen Hawking// 'Mind over matter': Stephen Hawking – obituary by Roger Penrose

সে লেখারই চুম্বক অংশ:

স্টিফেন হকিং---যিনি মারা গেলেন ৭৬ বছর বয়সে---তার মোটরচালিত হুইল চেয়ারে।

মাথাটা একদিকে কাত আর হাত দুটো কন্ট্রোল প্যানেলে কাজ করার জন্য আড়াআড়ি রাখা—এমন ছবিই সাধারণ মানুষের কল্পনা ভাসে। এ যেন নিরেট বস্তুকে ছাপিয়ে মনের জয়োল্লাসের প্রতীক। প্রাচীন গ্রিসের দেলসির দৈববাণীতে যেমন যেন তেম্নিভাবেই শারীরিক অপূর্ণতা ও ত্রুটি উসুল হয়ে গেছে প্রায় অতিলৌকিক এক ক্ষমতার বরে। যা বদৌলতে মুক্ত স্বাধীন মন তার ঘুরে বেড়িয়েছে গোটা ব্রহ্মাণ্ডজুড়ে। আর হঠাৎই হঠাৎই ব্রহ্মাণ্ডের নানা গোপনকে তিনি হাজির করতেন,  যেসব গোপন লুকানো থাকতো লোকচক্ষুর আড়ালে।

এভাবে লেখা শুরু করেন পেনরোজ। এরপর তিনি লেখেন:

অবশ্যই এমন ভাবালুতাময় ছবিও তাকে তুলে ধরে বটে, তবে তাতে তার আংশিক পরিচয়ই ফুটে ওঠে। যারা হকিংকে চেনেন, তারাই একজন সত্যিকারের মানুষ হিসেবে তার প্রবল উপস্থিতির গুণকীর্তন করতে পারবেন। এমন এক মানুষ যার ছিল জীবনের প্রতি ছিল তার অসীম উচ্ছ্বাস, ছিল রসিক এক মন আর সেইসঙ্গে বিপুল দৃঢ় মনোবল। ছিল প্রবল মানসিক শক্তির পাশাপাশি মানবিক দুর্বলতাও। আর দশটা স্বাভাবিক সাধারণ মানুষের মতোই।

সাধারণ মানুষের মধ্যে “the No 1 celebrity scientist” বলে তাকে নিয়ে যে ধারণা গড়ে উঠেছিল, তাতে খুব মজা পেতেন তিনি। তিনি কোথাও বক্তৃতা দিতে গেলে সেখানে বিপুল মানুষের উপস্থিতি ঘটতো ; সেটা যে বৈজ্ঞানিক কারণেই হতো, সম্ভবত ব্যাপারটা সব সময় এমন ছিল না।

বৈজ্ঞানিক সমাজ হয়তো তাকে নিয়ে আরো গুরুগম্ভীর মূল্যায়ন করতে পারবেন। পদার্থবিদ্যা এবং বিশ্বজগতের জ্যামিতিকে অনুধাবনে তার অসাধারণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে, বৈপ্লবিক অবদানসমূহের জন্য তিনি ছিলেন বিপুল সম্মানে সম্মানিত।

২১তম জন্মদিনের পরপরই ধরা পড়ে, তিনি এক অজানা নিরাময়-অযোগ্য রোগে ভুগছেন। সে সময় রোগটিকে শরীরের অঙ্গ-বিকল-করে-দেয়া মোটর নিউরোন ডিজিজ বা এএলএস নামে চিহ্নিত করা হয়।  এর পরপরই অন্য কেউ হলে যা করতো তিনি তা করলেন না। বিষণ্নতার কাছে নতি স্বীকার না করে তিনি বরং দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন মহাবিশ্বের ভৌত প্রকৃতি সংক্রান্ত মৌলিক প্রশ্ন সমূহের দিকে। কালক্রমে তীব্রতম শারীরিক প্রতিবন্ধকতার বিপরীতে তিনি এক্ষেত্রে অসাধারণ সফলতার নজির রাখলেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত মতকে ভুল প্রমাণ করে তিনি বেঁচেবর্তে রইলেন আরও ৫৫টি বছর।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৮

জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।