ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রধান শিক্ষক বাবর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৮
বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রধান শিক্ষক বাবর ‘আনন্দ শিক্ষা নিকেতন’

ঢাকা: ভারতের মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এক গ্রাম বেলডাঙ্গা। আজ থেকে ১৬ বছর আগে এ গ্রামের একটি স্কুলে প্রায় নিয়মিত চক চুরি হতো। কে নিয়ে যেতো স্কুলের চক? এমন প্রশ্ন শিক্ষকরুমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। 

শিক্ষকরা চক চুরির ব্যাপারটা জানতেও পারেন। ‘চক চোর’কে শনাক্তও করেন।

কিন্তু সেই ‘চক চোর’ বাবরকে শাস্তি না দিয়ে উপহার হিসেবে তুলে দেন কয়েক বাক্স চক! 

অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে তো? কিন্তু সত্যিকার অর্থে তাই ঘটেছে। কারণ ২০০২ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া শিশু বাবর যে মহৎ কাজটি করেছিলেন তার তুলনায় ‘চক চুরি’ খুবই নগণ্য।

স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে একটা বিষয় খুবই কষ্ট দিতো বাবরের শিশুমনে। সে যখন স্কুলে যায়, বা স্কুল থেকে ফেরে তখন তার বন্ধুরাই কাগজ কুড়িয়ে, ভাঙা বোতল দিয়ে টাকা উপার্জন করে। বাবরের ইচ্ছা হয় তারাও সহজপাঠ পাঠ করুক, স্কুল মাঠে খেলা করুক। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব হবে? 

অদম্য ইচ্ছাশক্তির বাবর তাই ছিন্নমূল বন্ধুদের জন্য খুলে ফেলেন ‘আনন্দ শিক্ষা নিকেতন’ নামে পাঠশালা। বাড়ির উঠোনেই শুরু হয় কার্যক্রম। স্কুল থেকে ফিরে রোজ বিকেলে চলে আলো ছড়িয়ে দেওয়ার এ মহৎ যজ্ঞ। সময় বাড়ে, সঙ্গে বাড়ে পরিসরও। উঠোন থেকে ‘আনন্দ শিক্ষা নিকেতন’ স্থানান্তরিত হয় ঘরে।  

বাবর বলেন, আমি যে স্কুলে পড়তাম, সেখান থেকে নিয়মিত চক নিয়ে আসতাম। চক না থাকলে পড়াবো কীভাবে। স্যাররা ব্যাপারটা বুঝতে পারার পর ভাবতো আমি একজন চোর। কিন্তু যখন তারা পুরো ব্যাপারটা জেনে যান তখন আমাকে কয়েক বাক্স চক উপহার দেন।  

গত ১৬ বছর ধরে বেলডাঙ্গা গ্রামে এভাবেই আলো ছড়াচ্ছেন বাবর। পড়িয়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রীকে। তখন থেকেই সবচেয়ে কম বয়সে অর্থাৎ নয় বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধান শিক্ষক বনে যান বাবর।

নয় বছর বয়সী সেই শিশু বাবর সম্প্রতি ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। এখন পড়ছেন স্নাতকোত্তরে।  

নিজের স্কুল নিয়ে, দেশ নিয়ে তার বিস্তর পরিকল্পনা। তিনি জানালেন, ‘সরকার সব একা করবে তা তো হতে পারে না। এগিয়ে আসতে হবে আমাদের। প্রত্যেকে এভাবে একটু একটু করে এগিয়ে এলেই তো এই পৃথিবীটা আরও অনেক বেশি সুন্দরভাবে বদলে যেতে পারে। তাই না’?     

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৮
এএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।