নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দিতে মাদুরোকে গত সপ্তাহে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর বেঁধে দেওয়া সময় (আলটিমেটাম) শেষ হওয়ার পর সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ডেনমার্কের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতি দিয়ে গুয়াইদোকে ‘অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক বিভাজনে আগে থেকেই গুয়াইদোর পক্ষে অবস্থান জানায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলি, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, পানামা, প্যারাগুয়ে ও পেরুর মতো দেশগুলো।
গত বছরের মে মাসে ভেনিজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হন মাদুরো। এ মাসের শুরুতে শপথ নেন এ রাজনীতিক। তবে বিরোধীরা প্রথম থেকেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে পুনর্ভোটের দাবি জানিয়ে আসছে।
সম্প্রতি দেশটির অর্থনীতিতে চরম মন্দাবস্থা দেখা দিলে রাস্তায় নামে বিরোধীরা। এরপর জাতীয় পরিষদের প্রধান গুয়াইদো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্ব দিতে থাকেন। তারপর তিনি নিজেকে ‘অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট’ বলেও ঘোষণা দিয়ে বসেন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্রদের তরফ থেকে গুয়াইদোকে ‘স্বীকৃতি’ দিয়ে মাদুরো সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
তবে গুয়াইদোকে স্বীকৃতি না দিলেও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেনের মতো কয়েকটি ইউরোপীয় শক্তি নতুন করে নির্বাচন দিতে গত সপ্তাহে মাদুরোকে আট দিনের সময় বেঁধে দেয়। অন্যদিকে রাশিয়া ও চীনের মতো সমাজবাদী পরাশক্তি মাদুরোর পক্ষে অবস্থান জানিয়ে এই আলটিমেটামের সমালোচনা করে।
আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর গুয়াইদোকে ‘স্বীকৃতি’ দিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। আর জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল বলেন, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রধান গুয়াইদোই ভেনেজুয়েলার বৈধ অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট।
তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমি এটা বলতে চাই না। কিন্তু অবশ্যই এটা এমন কিছু, যা মোকাবিলা করতে হলে বিকল্প ব্যবস্থা (ভেনেজুয়েলায় সৈন্য পাঠানো) দরকার।
তবে রাশিয়া বলেছে, ভেনেজুয়েলার এই রাজনৈতিক সংকটে পশ্চিমারা ‘নাক গলানোর’ চেষ্টা করছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে তার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, এভাবে নাক গলানোর মাধ্যমে ভেনেজুয়েলার বর্তমান সংকটের শান্তিপূর্ণ, কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান আসবে না।
অবশ্য নিকোলাস মাদুরো নতুন নির্বাচনের দাবি উড়িয়ে দিয়ে উল্টো যুক্তরাষ্ট্রকে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টার জন্য হুঁশিয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, তারা পরিস্থিতি যেদিকে ঠেলে দিচ্ছে, তাতে গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সংকট নিরসনে ‘সামরিক হস্তক্ষেপ’র যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তার জবাবে মাদুরো বলেছেন, এমন কিছুর চেষ্টা হলে হোয়াইট হাউস থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় বের হতে হবে ট্রাম্পকে।
অন্যদিকে যার নেতৃত্বে হুগো চাভেজের দেশ ভেনেজুয়েলার রাজপথ কাঁপছে, সেই গুয়াইদো বেশ কিছু দেশের সমর্থন পাওয়ার পর বলেছেন, ভেনেজুয়েলানদের কাছে ‘মানবিক সহায়তা’ পৌঁছে দিতে শিগগির আন্তর্জাতিক জোট গঠন করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৯
এইচএ/
** ভেনেজুয়েলায় সেনা পাঠানোর ছক কষছেন ট্রাম্প!