ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘কাশ্মীরী হওয়ায়’ রাস্তায় পেটানো হলো দুই জনকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১৯
‘কাশ্মীরী হওয়ায়’ রাস্তায় পেটানো হলো দুই জনকে

ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনৌ ব্যস্ত রাস্তায় জনসম্মুখে দুই কাশ্মীরীকে পিটিয়েছে একটি মৌলবাদী দলের কয়েকজন দুর্বৃত্ত। ফল ব্যবসায়ী ওই দু’জন ‘কাশ্মীরী হওয়ার অপরাধে’ এই আক্রমণের শিকার হয়েছেন। ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় চলছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, বুধবার (৬ মার্চ) বিকেল ৫টার দিকে লখনৌর মধ্যাঞ্চলের দালিগঞ্জ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে আক্রমণকারীদের বলতে শোনা যায়, কাশ্মীরের লোক বলেই ওই দু’জনকে পেটানো হচ্ছে।

আক্রমণকারীদের মধ্যে গেরুয়া রংয়ের কুর্তা পরিহিত দু’জনই বেশি পিটিয়েছে ওই কাশ্মীরীদের।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তায় চাদর বিছিয়ে ফলের পসরা সাজিয়ে বসা দুই ব্যক্তিকে মারছিল মৌলবাদী দলটির কয়েকজন। এক হামলাকারী লাঠি নিয়ে সমানে পেটাচ্ছিল দু’জনকে। তখন কাশ্মীরী একজন হাত দিয়ে নিজের মাথা ঢেকে তাকে আর না মারতে অনুনয়-বিনয় করছিল। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক কাশ্মীরী তার ফলের দোকান গুটিয়ে পড়িমড়ি করে স্থান ত্যাগ করতে চাইলেও তার কাছে পরিচয়পত্র চাইছিল গেরুয়া রংয়ের জামা পরিহিত অপর আক্রমণকারী।

তখন অবশ্য স্থানীয় কয়েকজন লোক দুই কাশ্মীরীকে আর না মারতে বলে। সেসময় একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না, পুলিশকে খবর দিন। ’

জানা যায়, ওই কাশ্মীরীরা লখনৌতে বেশ ক’বছর ধরে ফল ব্যবসা করে আসছিলেন।

ঘটনাটির ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগ ও সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ এনডিটিভিতে দুই কাশ্মীরীকে পেটানো নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন টুইটারে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘কাশ্মীরে ভারত সম্পর্কে ধারণা নষ্ট করতে এই ভিডিওর চেয়ে ক্ষতিকর আর কিছু হতে পারে না। এভাবেই আরএসএস/বজরং দলের (বিজেপি সংশ্লিষ্ট) গুণ্ডাদের দিয়ে কাশ্মীরীদের রাস্তায় রাস্তায় মারতে থাকুন এবং তারপর ‘অটুট অং’ চেতনা বিক্রির চেষ্টা করুন। এভাবে তো চলতে পারে না। ’

দুই কাশ্মীরীর ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টিসহ বিভিন্ন দল। নিন্দা করেছেন সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিনের প্রেসিডেন্ট আসাদুদ্দিন ওয়েসিসহ অনেকে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ভারতের বিশেষায়িত বাহিনী সিআরপিএফের ৪৪ জওয়ান নিহত হন। সেই ঘটনার পর থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কাশ্মীরীরা ‘টার্গেট’ ও হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য কাশ্মীরীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি নির্দেশনাও জারি করতে হয়েছে।

লখনৌর ঘটনাটির পর দাঙ্গা ও শান্তি বিঘ্নিত করার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট হযরতগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছে এবং একজন আটক হয়েছে। যদিও ঘটনার মূল অভিযুক্ত বিশ্ব হিন্দু দলের প্রেসিডেন্ট এখনো গ্রেফতার হননি এবং তিনি তার ফেসবুকে নিয়মিত পোস্ট করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।